
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর :: গাজীপুরের শ্রীপুরে নাজমুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি তিন সহোদরের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগুনে তিন সহোদরের তিনটি বাড়ির ৮টি বসতঘর পুড়ে গেছে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহত হয়নি। শনিবার (১০ মে) রাতে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের যোগীরশীট গুজারমোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত তিন সহোদর হলেন—ওই এলাকার মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে ওমর ফারুক, বাবুল মিয়া ও স্বপন মিয়া।
তিন সহোদরের মা ছায়মন নেছা অভিযোগ করেন, নিহত নাজমুল ইসলামের স্বজনরা রাতের আঁধারে আমাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন। এতে নেতৃত্ব দেন নিহত নাজমুল ইসলামের চাচা হাফিজ উদ্দিন। আগুনে ধান-চাল, আসবাবপত্র ও গাছপালাসহ প্রায় ৪০ লক্ষাধিক টাকার মাল পুড়ে গেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হাফিজ উদ্দিন দাবি করেন, ‘ঘটনাটি সাজানো। তুচ্ছ ঘটনায় আসামিরা নাজমুলকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এখন আমাদেরকে ফাঁসানোর জন্য ওই নাটক সাজিয়েছে আসামিরা। পাশাপাশি তিনটি বাড়ি। বাড়ির আটটি বসতঘর আধাপাকা। ঘরগুলোর পোড়া কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে। আজ ভোররাতে তারা ওই তিনটি বাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখে। তবে আগুন লাগার কারণ জানে না কেউ।
প্রতিবেশীরা জানায়, গোয়ালঘরে গরু ছিল। গরুগুলো আগেই বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়েছিল বাড়ির লোকজন। আগুন লাগার পর তারা কেউ যায়নি সেখানে। আগুনে ঘরগুলো পোড়া শেষে নিজেই নিভে যায়।
তবে তিন সহোদরের মা ছাইমন নেছা দাবি করেন, মামলা হওয়ার পর তার তিন ছেলেসহ নাতিরা গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে আছে। এরপর ওই তিনবাড়িই ছিল পুরুষশূন্য। কিন্তু বাদীপক্ষের স্বজনরা তাদের বাড়ি থেকে চলে যেতে নানাভাবে ভয় দেখিয়েছে। পরে ঘরগুলোতে তালা দিয়ে তার পুত্রবধূরা সন্তানদের নিয়ে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তবে বাড়ি ছাড়েননি তিনি। ছাইমন নেছা অভিযোগ করেন, রাত ১১টার পর অনেক লোকজনের উপস্থিতি টের পান তিনি। পরে ঘর থেকে বের হয়ে পাশে ঝোপের ভেতর লুকিয়ে পড়েন। সেখানে লুকিয়ে তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিতে দেখেন। ছাইমন নেছা বলেন, ‘পাশের কয়েক বাড়ির মানুষ আগুন দিতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু বাদীপক্ষের লোকজন শুনে নাই।’ তবে গোয়ালঘরের গরুগুলো আগেই সরিয়ে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি ছাইনমন নেছা।
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর এম মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আগুন লাগার বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসকে কেউ অবহিত করেনি।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ‘হত্যা মামলার আসামিদের বাড়িতে আগুন লাগার বিষয়টি জেনেছি। ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করছে।’ এর আগে ১ মে ওই এলাকায় ধানক্ষেতে আইলে ধানের আঁটি রাখা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে নাজমুল (৩২) ও তার বাবা মোসলেম উদ্দিনকে (৫৮) বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হামলা চালান একই এলাকার আল আমিনসহ সহযোগীরা। একপর্যায়ে নাজমুল ও তার বাবা মোসলেম উদ্দিনের পেটে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করলে দুজনেরই নাড়িভূঁড়ি বাইরে বেরিয়ে আসে। পরে স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর গত শুক্রবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাজমুল মারা যান। নিহত নাজমুল একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। এ ঘটনায় নাজমুলের চাচা হাফিজ উদ্দিন বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।



Discussion about this post