স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর:- জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির সুযোগে গাজীপুরে শালবন দখল করে পাঁচ হাজারের বেশি বাড়িঘর ও দোকানপাটসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে রয়েছে টিনশেড, আধাপাকা ও বহুতল ভবন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বনভূমি দখল অব্যাহত রয়েছে। এতে ভাওয়াল বন খ্যাত শালবনের আয়তন ছোট হয়ে আসছে। হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য। বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বন্যপ্রাণী। গাজীপুর বন বিভাগের মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পরিবেশ সচেতন মহলের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে বন দখলকারীদের তালিকা তৈরি করছে বন বিভাগ। কিন্তু তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে গেজেটভুক্ত বনভূমি উপেক্ষা করা হয়েছে। তালিকায় গুরুত্ব পেয়েছে যেসব ভূমির আরএস বন বিভাগের নামে রেকর্ডভুক্ত। সেই তালিকাও আবার বিতর্কিত ও অসম্পূর্ণ। তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে ঘুস গ্রহণের মাধ্যমে অনেক দখলকারীর নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী দখলকারী অনেকেই পরবর্তী সময়ে পুরাতন বাড়িতে নতুন কক্ষ নির্মাণ করেছে। অথচ এসব দখল আমলে নেয়নি বন বিভাগ। এছাড়া মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চললেও তা জোরালো নয়। পরিকল্পনাহীন এসব উচ্ছেদ অভিযানে হামলার ঘটনাও ঘটছে। এতে সমালোচনার মুখে পড়েছে উচ্ছেদ অভিযান। পরিবেশ সচেতন মহল বলছে, বন দখলের সুযোগ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বন দখলে সহযোগিতাকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তদন্তে চিহ্নিত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে প্রাইজ পোস্টিং। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে অনেকেই আবার তদবির করে একই জেলায় অন্য বিটে বদলি হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর ভাওয়াল ও জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের অধীন সংরক্ষিত বনে কমপক্ষে ৬০টি, শ্রীপুর রেঞ্জে ৫০টি, কালিয়াকৈর রেঞ্জে ৬০টি ও রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জে ১২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং রিসোর্টসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ এসব দখলকারী প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে নীরব ভূমিকায় বন বিভাগ।
দখল তালিকার বিষয়ে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক এএসএম জহির উদ্দিন আকন বলেন, দখল তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। কেউ বাদ পড়েছে কিনা সেটি দেখা হবে। শুধু বনের আরএস রেকর্ড ধরে দখল তালিকা প্রস্তুত হয়েছে কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। দখল তালিকা একটি চলমান প্রক্রিয়া বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল ঢাকার বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারীর মোবাইল ফোনে কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।
ঢাকা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক এনামুল হক বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়। ওই সময় শুধু বন দখল নয়, আমাদের অফিসেও হামলা হয়েছে। অনেকে তখন আহতও হয়েছেন। আমাদের যে অল্পসংখ্যক জনবল তা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি। উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। অভিযান চলছে। পর্যায়ক্রমে সব বাড়িঘর স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ রুহুল আমিন রতন | মোবাঃ ০১৯১৫-০৯১৫২৯ , ০১৮৫৮-৩১০৮৩৫