
স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী :: টঙ্গীর আলোচিত বাক প্রতিবন্ধী রাবেয়া সাবরিন লিখন (৩৩) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এ ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর জেলা শাখা। মাত্র ১ হাজার ২৫০ টাকা, একটি মোবাইল ফোনের বাক্স ও ২ কেজি চাল লুটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানার নিন্দারাবাদ গ্রামের আব্দুল মান্নান মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম উজ্জল (২৮) এবং তার স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (১৯)। সাদিয়া একই গ্রামের মৃত স্বপন গাজীর মেয়ে।
পিবিআই জানায়, প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে রান্না করতে ঘর থেকে বের হন লিখন। এই সুযোগে পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া সাইফুল ও তার স্ত্রী সাদিয়া দরজা খোলা পেয়ে ঘরে ঢুকে তাকে হত্যা করে।
তদন্তে জানা যায়, সাইফুল একজন গার্মেন্টকর্মী এবং তিনি অনলাইনে আইপিএল জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। এতে করে তার সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন দেখা দেয় এবং বাসাভাড়া বাকি পড়ে যায়। এ অবস্থায় তিনি প্রতিবেশী রাবেয়ার বোনাস পাওয়ার খবর পেয়ে টাকা লুটের পরিকল্পনা করেন।
ঘটনার দিন ভোরে রাবেয়া রান্নায় ব্যস্ত থাকাকালে সাইফুল ও তার স্ত্রী ঘরে প্রবেশ করে। সাইফুল পেছন থেকে রাবেয়ার মুখ চেপে ধরে, তাকে বিছানায় উপুড় করে ফেলে ও মুখ ও হাত বেঁধে ফেলে। এরপর সাদিয়া তার পা বেঁধে দেয়। এক পর্যায়ে রাবেয়া নিস্তেজ হয়ে পড়লে সাদিয়া নিজ ঘরে ফিরে যান। পরে সাইফুল রাবেয়ার ব্যাগ থেকে ১,২৫০ টাকা, মোবাইল ফোনের বাক্স ও ২ কেজি চাল নিয়ে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর সে তার কর্মস্থলে চলে যায়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অভিযুক্ত সাদিয়াই রাবেয়ার রান্নার গন্ধ পেয়ে তাকে ডাকতে যান। দরজা বাইরে থেকে বন্ধ দেখে বাড়ির মালিককে খবর দেন। পরে সবাই মিলে দরজা খুলে রাবেয়ার নিথর দেহ হাত, পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন।
এ বিষয়ে পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, লিখন একজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী নারী ছিলেন। ঘটনার পর পুলিশের একাধিক তদন্ত সংস্থা অনুসন্ধান শুরু করে। একপর্যায়ে অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে এলে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মে ভোরে টঙ্গী পূর্ব থানাধীন গাজীবাড়ী পুকুর এলাকার একটি ভবনের ৩য় তলা থেকে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী লিখনকে হাত-পা বাঁধা উদ্ধার করা হয়। পরে ২১ মে নিহতের মা বাদী হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। লিখন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের টঙ্গী শাখায় কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন।



Discussion about this post