
স্টাফ রিপোর্টার:- গাজীপুর মহানগরীর গাছা এলাকায় জমি দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতার নাম মাসুদুর রহমান মাহী। তিনি ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য।
জুলাই বিপ্লবের পর অনেকে পালিয়ে গেলেও তিনি বীরদর্পে দাপড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। এমনকি অভ্যুত্থানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে হয়ে উঠেছেন আগের চেয়ে বেপরোয়া। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, গাছা থানার সাবেক ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ, এসআই কাজল ও লিটনের ছত্রছায়ায় মহানগরীর গাছাখানায় দক্ষিণ খাইলকুর এলাকায় একটি জমি দখলের চেষ্টা করেন মাহী। বিষয়টি নিয়ে তিনি আদালতে মামলাও করেন, কিন্তু রায় আসে জমির মালিক প্রকৌশলী ওমর আলীর পক্ষে। এরপর গায়ের জোরে ও পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমিটি দখলের চেষ্টা করেন তিনি। তার পক্ষ হয়ে ওসি রাশেদ, এসআই কাজল ও লিটন মিলে ভুক্তভোগীকে দফায় দফায় হয়রানি করেন ও ভয়ভীতি দেখান।
থানা পুলিশের কাছে ন্যায়বিচার না পেয়ে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর ওসি রাশেদকে গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) বদলি করা হয়। গাছায় নতুন ওসি এলেও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকে। এক পর্যায়ে বিষয়টি জানানো হয় গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) তাহেরুল হক চৌহানকে। জমি দখলে ছাত্রলীগ ক্যাডারকে সহায়তা, ওসি রাশেদ বদলিজমি দখলে ছাত্রলীগ ক্যাডারকে সহায়তা, ওসি রাশেদ বদলি
তিনি গাছার ওসিকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী ভুক্তভোগীকে ডেকে আদালতের রায় অনুযায়ী জমিতে স্থাপনা তৈরির বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিলে নির্মাণ কাজে হাত দেন প্রকৌশলী ওমর।
পুলিশের নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়েও নির্ভয়ে কাজ করতে পারছেন না জানিয়ে প্রকৌশলী ওমর বলেন, জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলে গত সোমবার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন মাহী। তারা কাজে বাধা দিলে পুলিশে ফোন করা হয়। এরপরও দফায় দফায় বাধা দেন তিনি। পরদিন আবারও নির্মাণ কাজে বাধা দেন মাহী। তার নিজের করা মামলায় আদালত যে রায় দিয়েছে, সেটিও মানছেন তিনি।
স্থানীয়রা বলেন, আওয়ামী লীগের সময় শুধু বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কারণে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে রাতে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গুম-খুন করা হয়েছে। বছরের পর বছর কারাগারে রেখে নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার কারো অধিকার হরণ করছে না, আওয়ামী লীগের কেউ মামলা ছাড়া গ্রেপ্তার হচ্ছে না। এই সুযোগে অনেক আওয়ামী ও ছাত্রলীগ বেপরোয়া আচরণ করছে।
তারা জানান, মাহী মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন জমি দখল এবং চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন। একাধিক ব্যক্তি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও সুবিচার পায়নি। ছাত্রলীগের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা থেকেই পুলিশ ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ায় না। এসব কারণেই ওসি রাশেদকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরও প্রভাব কমেনি মাহীর।
সরেজমিনে সোমবার ঘটনাস্থলে দেখা যায় মাহীকে। তিনি দলবল নিয়ে মোটরসাইকেলে মহড়া দেন এবং প্রকৌশলী ওমরকে নানাভাবে হুমকি ধমকি দেন। এমনকি পত্রিকায় লেখালেখি করেও তার প্রভাব কমানো যাবে না বলে দম্ভ করেন বলেন মাহী। হুমকি দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে জমিটি দখল করে প্রকৌশলী ওমরকে এলাকা ছাড়া করা হবে।
সংশ্লিষ্ট জমির পাঁচ ফুট জায়গা নিজের দাবি করে মাহী বলেন, ভূমির দলিলে এখানে রাস্তা রয়েছে, কিন্তু জমির মালিক জায়গা ছাড়ছে না। এটাই বলার জন্য এসেছি। তবে জমিওয়ালাকে কোনো হুমকি দেওয়া হয়নি।
ছাত্রলীগ ক্যাডারের বেপরোয়া আচরণ ও জমি দখল-চাঁদাবাজির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে গাছা থানার নতুন ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগে কী হয়েছে তা আমি জানি না, বর্তমানে এ সব কর্মকাণ্ড করার কোনো সুযোগ নেই । যদি কেউ করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



Discussion about this post