
শফিকুল ইসলাম শিমুল,গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি:- দিনের বেলা শতাধিক শিশু-কিশোরের কোলাহলে মুখর গাজীপুরের টঙ্গী এরশাদ নগর ১ নম্বর ব্লকে অবস্থিত রওশন এরশাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর সেই স্কুল চত্বর পরিণত হয় ছোটখাটো একটি মাদক আস্তানায়। শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে মাঠ, এমনকি স্কুলের টিনশেড ছাদেও চলে প্রকাশ্যে মাদকসেবন। ভয়ে নীরব থাকেন এলাকাবাসী, অসহায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী মমতাজ মিয়া বলেন, ‘রাত হলে স্কুল এলাকায় সন্ত্রাসী-মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। বাধা দিলেই হুমকি, এমনকি মারধর করে। আমার স্ত্রীকেও একবার আক্রমণ করে।’ নামমাত্র নিরাপত্তাব্যবস্থা, জরাজীর্ণ ভবন, আলো-লাইটহীন পরিবেশ আর প্রাচীর না থাকায় সন্ধ্যার পর স্কুলটিকে মনে হয় ভূতের বাড়ি। কোনো আনুষ্ঠানিক বেতন না পাওয়া এই নিরাপত্তাকর্মী পরিবার নিয়ে একটি কক্ষে থাকেন এবং বিনিময়ে স্কুল পাহারা দেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিমা সিদ্দিক জানান, “শুধু মাদকসেবীই নয়, স্কুলের সম্পত্তির একটা বড় অংশ বেদখল হয়ে গেছে। পুরাতন ভবনের ছাদ ফেটে পড়ছে। অথচ বরাদ্দ নেই, সংস্কার হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে স্কুলটি হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে।” ১৯৭৮ সালে ছাপড়াঘরে যাত্রা শুরু করা বিদ্যালয়টির আধাপাকা ভবন তৈরি হয় ১৯৮৭ সালে, আর তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি পাকা ভবন তৈরি হয় ২০০৪ সালে। তারপর থেকে আর কোনো সংস্কার হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে এখনো চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সংকট হলো জনবল ও প্রশাসনিক উদাসীনতা। আগে এখানে একজন দপ্তরী ছিলেন, যিনি বর্তমানে স্থানান্তর হয়ে থানার শিক্ষা অফিসে কাজ করছেন। অথচ তার বেতন এখনো বিদ্যালয় থেকেই দেওয়া হচ্ছে। ফলে অফিস কক্ষ পরিষ্কার, ঘণ্টা বাজানো, এমনকি চেয়ার-টেবিল মোছা পর্যন্ত করতে হয় শিক্ষকদের।
প্রধান শিক্ষক রহিমা সিদ্দিক বলেন, “সবকিছু মিলিয়ে স্কুলটির শিক্ষার পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। ৩ বছর আগেও যেখানে শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ৩০০, এখন তা নেমে এসেছে ২০৭-এ।” তিনি আরও বলেন, “মাদকসেবী ও দখলদারদের বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, গবর্নিং বডির সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের জানানো হয়েছে বহুবার। তবুও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।” স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সন্ধ্যার পর শিশুদের স্কুলের পাশ দিয়ে চলাচল করানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তারা দাবি করেছেন, স্কুলটিতে নিয়মিত পুলিশ টহল, আলো-লাইট স্থাপন ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিদ্যালয়টির বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে জায়গা সংক্রান্ত কিছু জটিলতার কারণে নতুন ভবনের বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না।” বিদ্যালয়ের বর্তমান চিত্র শুধু একটি স্কুলের নয়, পুরো ব্যবস্থাপনাগত গাফিলতি ও অবহেলার প্রতিচ্ছবি। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে ধীরে ধীরে এমন আরও অনেক সরকারি বিদ্যালয় ধ্বংসের পথে হাঁটবে।



Discussion about this post