
জাহিদ হাসান জিহাদ:- গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার সাফারি পার্ক সড়কের একটি অটোরিকশা স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপি নেতা ইসলাম উদ্দিনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনায় চালকদের মারধর, টাকা ছিনিয়ে নেওয়া ও গুদামে আটকে রাখার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে। অভিযুক্তদের একজন ভাওয়ালগড় ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
অটোরিকশা স্ট্যান্ডে হামলা ও চাঁদাবাজি: ১১ জুলাই বিকেলে সাফারি পার্ক সড়কের অটোরিকশা স্ট্যান্ডে ইসলাম উদ্দিনের অনুসারীরা চাঁদা আদায় করছিলেন বলে অভিযোগ। বাধা দিলে দেলোয়ার হোসেন, রাফিদ মিয়া ও রাকিব সরকারকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করা হয়। দেলোয়ারের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে ইসলাম উদ্দিনের চালের গুদামে আটকে রাখা হয়। পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে।
জমি দখল নিয়ে জিডি ও অভিযোগ: এর আগেই, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর: ১২৮৬) করেন ঢাকার বাড্ডার বাসিন্দা মো. মারুফ হোসেন মোল্লা। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, মাহনা ভবানীপুর মৌজার বানিয়ারচালা এলাকায় তাঁর মালিকানাধীন আরএস খতিয়ান ৭৬২, দাগ নম্বর ২৫৫৩—এর আওতায় থাকা ৬.৯১ শতাংশ ও ১৭.৯৫ শতাংশ জমিতে ইসলাম উদ্দিন ও তাঁর সহযোগীরা বেআইনিভাবে প্রবেশ করে গাছ কেটে ফেলে, বেড়া দেয় এবং জোরপূর্বক দখলপ্রক্রিয়া শুরু করে।
জমির ওপর স্থাপিত হয় ‘বিএনপির অফিস: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, বাঘের বাজার এলাকায় জমি জবরদখল করে জমির একাংশে ইসলাম উদ্দিন দলীয় ব্যানার টাঙিয়ে ‘বিএনপির অফিস’ প্রতিষ্ঠা করেন। জমির প্রকৃত মালিকানা ছাড়াই রাজনৈতিক প্রতীক ও পরিচয় ব্যবহার করে জমি দখলকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ: ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে করা এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় – ইসলাম উদ্দিন নিজের প্রভাব কাজে লাগিয়ে জমি দখল, বাজার ও স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি আওয়ামী সরকারের সময়ে গাজীপুর সদর উপজেলা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা কফিল উদ্দিনের (বিএসসি) সঙ্গে জুটি বেঁধে বাঘের বাজার ও বানিয়ার চালা এলাকায় একাধিক নীরিহ ব্যক্তির কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি জবর দখল করেন। ৫ আগস্টের পর কফিল উদ্দিনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সদর উপজেলা বিএনপির দাপটে বিশেষ নেতার সঙ্গে জুটি বাঁধেন পুরনো কৌশলের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে। প্রভাব-সম্পর্ককে তিনি দখলদারিত্বে কাজে লাগান। সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, অনেকে জমি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় একাধিক পরিবারের ওপর হামলার চেষ্টা হয়, এমনকি নারী সদস্যদেরও হুমকি দেওয়া হয়। একাধিক ব্যক্তি ইসলাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে একই ধরনের দখল, হুমকি ও নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন, কিন্তু ভয়ে তারা প্রকাশ্যে আসছেন না।
একাধিক পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ: ইসলাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি, দখলে দলীয় অফিস স্থাপন এবং রাজনৈতিক সখ্যতা ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে স্থানীয়দের বক্তব্য ও অভিযোগ বিশ্লেষণ করে বলা হয়-ইসলাম উদ্দিন এলাকায় একাধিক স্থানে জমি দখল করে রেখেছেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, যার মাধ্যমে বিভিন্ন বাজার, গুদাম ও স্ট্যান্ডে আধিপত্য বিস্তার করে চাঁদা আদায় করা হয়।
ভিডিও ও ঘনিষ্ঠ সখ্যতার ছবি: এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে ইসলাম উদ্দিনের জমি দখলের ভিডিও ফুটেজ এবং সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে কক্সবাজার সীবিচে তোলা একাধিক ঘনিষ্ঠ ছবি, যা রাজনৈতিক সুযোগ—সুবিধা ভোগ ও সখ্যতার প্রকট প্রমাণ। এই সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই তাঁকে প্রশাসনিকভাবে ‘অপ্রতিরোধ্য’ করে তুলেছিল বলে অভিযোগ।
অর্থ ও আধিপত্যের উত্থান: স্থানীয়রা বলেন, একসময় ইসলাম উদ্দিন ভবানীপুর বাজারে সবজি বিক্রি করতেন। এখন তিনি জুট ব্যবসা, চালের গুদাম, বাজার, ফুটপাত ও অটোস্ট্যান্ড দখল, জমি কেনাবেচা ও রাজনৈতিক রঙ বদলে কয়েক কোটি টাকার মালিক। তাঁর রয়েছে নিজের পেটোয়া বাহিনী। পুলিশি তদন্তে আরও বিস্তৃত চিত্র প্রকাশ পেতে পারে। ‘আটকে রাখা’ দেলোয়ারের পরিবার বলছে-এটা নিয়মিত চিত্র: হামলার শিকার চালক দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের অভিযোগ, ইসলাম উদ্দিনের লোকজন প্রায়ই চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। কেউ না দিলে মারধর ও হুমকি নতুন কিছু নয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাজার, ফুটপাত, গুদাম, এমনকি সাফারি রোডের পাশে গেট লাগিয়েও টোল আদায় করেন ইসলাম উদ্দিনের লোকজন।
জয়দেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তৌহিদ আহম্মেদ বাংলাভূমিকে বলেন, “চাঁদাবাজির ঘটনায় মামলা হয়েছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদেরও গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলমান।” এদিকে সচেতন লোকজনের মধ্যে কানাঘুষা চলছে।
তাদের বক্তব্য: একজন ব্যক্তি—যিনি একসময় ছিলেন ভবানীপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা, এখন কোটিপতি; যিনি আওয়ামী লীগের ছায়ায় ছিলেন, এখন বিএনপির নেতা তাঁর বিরুদ্ধে উঠে এসেছে জমি দখল, চাঁদাবাজি, হামলা, দলীয় ব্যানার গেঁথে জমি গ্রাস ও ভয়ভীতির বিস্তৃত অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে, রাজনৈতিক পরিচয় কি তাকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখবে? না কি তদন্ত, বিচার ও জবাবদিহির পথেই শেষ হবে এই দখলের রাজত্ব? ।
এছাড়াও ইসলাম উদ্দিন বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলে জমি দখলের এবং চাঁদাবাজি ভিডিও পোস্ট দিয়ে বিভিন্ন মানুষ লিখেছেন, “এই সেই কুখ্যাত চাঁদাবাজ ইসলাম উদ্দিন, যিনি ইমামের বেশে শয়তানের কাজ করতেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে নিজে যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন, আবার মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি দখল করেছেন।”



Discussion about this post