প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫, ৭:০৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১৭, ২০২৫, ৭:০২ পূর্বাহ্ণ
বুটের নিচে পিষ্ট বাংলাদেশের এক নির্মম প্রতিচ্ছবি — ইমন তালুকদারের মৃত্যু আমাদের কী শেখালো?

শেখ মামুনুর রশিদ মামুন :- ১৬ জুলাই ২০২৫, গোপালগঞ্জ। এই তারিখটি ক্যালেন্ডারের একটি সাধারণ দিন হতে পারতো। কিন্তু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি হয়ে থাকলো এক কলঙ্কিত দৃষ্টান্তের দিন। এক তরুণ— ইমন তালুকদার, মাত্র ১৮/১৯ বছরের একটি জীবন, পিতা আজাদ তালুকদারের একমাত্র ভরসা, সংসারের একমাত্র স্বপ্ন— খুন হল রাষ্ট্রীয় বুটের নিচে। আজ বাংলাদেশ লজ্জিত! আজ বাংলাদেশ ব্যথিত! আজ বাংলাদেশ বিবেকহীন রাষ্ট্রের করুণ চিত্রপট হয়ে উঠেছে। কে ছিল ইমন তালুকদার? ইমন ছাত্র ছিল না, কোনো রাজনীতির পোস্টার-ব্যানারে শোভিত নাম নয়। সে ছিল এই দেশের কোটি কোটি গরীব পরিবারের এক ক্ষুদ্র প্রতিনিধি। পরিবারের দায়ে সে হাড়ি-পাতিলের দোকানে শ্রমিকের কাজ করতো। জীবনের বড় স্বপ্ন ছিল দুই বেলা দুই মুঠো ভাত। কিন্তু সে আর বাড়ি ফিরেনি। সন্ধ্যায় তার নিথর দেহ পাওয়া গেল হাসপাতালের বিছানায়— মুখে রক্ত, শরীরে বুটের দাগ, উরুতে গুলির চিহ্ন। কী ছিল তার অপরাধ? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার দুপুরে তাকে হঠাৎ ধরে নিয়ে যায় সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ বলে সন্দেহ করা হয়। তারপর —টেনে-হিঁচড়ে নেওয়া হয়, বুটের লাথিতে জর্জরিত করা হয়, নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্র কী বার্তা দিচ্ছে?বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আজ শঙ্কিত। এ কি সেই বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের জীবন এতটা মূল্যহীন? যেখানে গরিব ঘরের ছেলে হলে বিচার পাওয়া স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়? যেখানে প্রশ্ন তুললেই নিথর লাশ হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে হয়? সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ! বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ছিল গৌরবের নাম, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় পৃথিবীজুড়ে প্রশংসিত বাহিনী। কিন্তু ইমনের মতো হাজারো নিরীহ মানুষের মৃত্যুর পর সাধারণ মানুষের মাঝে জন্ম নিচ্ছে ভীতিকর এক প্রশ্ন—সেনাবাহিনী কি আজ ক্ষমতাসীনদের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হচ্ছে? আমরা দেখছি — চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, এমনকি ঢাকাতেও হঠাৎ হঠাৎ গায়েবি গ্রেফতার, নির্যাতন আর বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ বাড়ছে। এই অভিযোগ গুলো মুছে দিতে না পারলে সেনাবাহিনীর পেশাদার মর্যাদা চরম সংকটে পড়বে। আজ প্রশ্ন জনতার— ছাত্রলীগ কর্মী বললে কি মৃত্যু অনিবার্য? গরিবের সন্তান বললে কি তাকে অপমান, নির্যাতন আর মৃত্যু সইতে হবে? রাষ্ট্র কি আর মানুষের নয়, শুধু লাঠি আর বুটের মালিকদের হয়ে গেছে? এই মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়— বাংলাদেশে গরিবের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। রাষ্ট্রীয় বাহিনী আজ বিচারহীনতার প্রতীক হয়ে উঠছে। সর্বশেষ, আইন নেই, বিচার নেই— যা আছে তা কেবল ‘শক্তির জোর’! আমাদের দাবি, দেশের বিবেকের দাবি : ইমন তালুকদারের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই। ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করতে হবে, দায়ীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে আইনের শাসন ফেরাতে হবে— যেখানে গরিব আর নিরীহ মানুষেরও জীবন-মর্যাদা থাকবে। সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি পুনঃউদ্ধারে দায়ী সকল ‘অপশক্তি’র বিচারের আওতায় আনতে হবে। আজ প্রশ্ন আপনাদের প্রতি— জনাব সেনাপ্রধান, আজ আপনার কাঁধে জাতির আস্থা। আপনি কী এই লজ্জা মোচন করবেন? আপনি কী এই হত্যার দায় রাষ্ট্র থেকে মুক্ত করবেন? আপনি কী মানুষকে প্রমাণ করবেন— সেনাবাহিনী জনগণের বাহিনী? নাকি ইতিহাসের পাতায় এই রাষ্ট্র শুধু নির্যাতনের প্রতীক হয়ে থাকবে? ইমন শুধু একটি নাম নয়— সে বাংলাদেশের লাখো নিপীড়িত তরুণের আর্তনাদ। আজ তার নিথর দেহ শুয়ে আছে, কিন্তু তার প্রশ্ন বাতাসে গুঞ্জন তুলছে— “আমার অপরাধ কী ছিল?”প্রশাসন চোখ বন্ধ করতে পারে, রাষ্ট্র নীরব থাকতে পারে— কিন্তু ইতিহাস কখনও ক্ষমা করে না। আমাদের হাতে এখনও সময় আছে। রাষ্ট্র যদি চায় গণমানুষের পাশে দাঁড়াতে— এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ রুহুল আমিন রতন | মোবাঃ ০১৯১৫-০৯১৫২৯ , ০১৮৫৮-৩১০৮৩৫
© সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত !! Email: [email protected]