
শেখ মামুনুর রশীদ মামুন:- সরকারি দপ্তর গুলোতে দুর্নীতি যেন এখন রীতিমতো প্রতিষ্ঠিত প্রথা। ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার চার শীর্ষ সরকারি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে উঠে এসেছে কোটি কোটি টাকা লুটপাট, ঘুষ, কমিশন বাণিজ্য ও ভয়াবহ অনিয়মের বিস্ফোরক অভিযোগ। পাউবো, জনস্বাস্থ্য, এলজিইডি এবং পিডিবি—প্রতিটি বিভাগই যেন দুর্নীতির দুর্গে পরিণত হয়েছে।- পানি উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ : প্রকল্পহীন কোটি টাকা লুটের অভিযোগ। ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিলের বিরুদ্ধে নদী খননসহ বিভিন্ন প্রকল্পে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে জানা যায়, বরাদ্দের টাকা বছরের শুরুতেই উত্তোলন করে প্রকল্পের কাজ ‘অদৃশ্য’ করে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী ও ঠিকাদাররা জানিয়েছেন, ফিল্ড পরিদর্শনে প্রকল্পের কোনো বাস্তবায়নই পাওয়া যায়নি। তবু কোটি কোটি টাকা উত্তোলনের নথিপত্র ঠিকঠাক। দুর্নীতির এই ভয়ঙ্কর চক্রে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে সচেতন মহল।
জনস্বাস্থ্য ময়মনসিংহ : বদলি হয়েও আবার ফিরেছেন আগের জায়গায় দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত প্রকৌশলী! জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছামিউল হক ২০২১ সালে দুর্নীতির অভিযোগে ময়মনসিংহ থেকে বদলি হয়ে শেরপুর গেলেও, পুনরায় ফিরে এসেছিলেন ময়মনসিংহে! এখন আবার বদলি তাও আবার শেরপুরে! তার মানে কি? স্থানীয় ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের ভাষ্য, টেন্ডার অনুমোদন থেকে বিল পাস—সব ক্ষেত্রেই ছিল নির্দিষ্ট হারে কমিশনের ‘রেটলিস্ট’। ঘুষ ছাড়া কোনো প্রকল্পের ফাইলই নড়তো না। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তিনি অল্পদিনেই দুর্নীতির ভয়াবহ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। সচেতন মহল প্রশ্ন তুলছে—জনস্বাস্থ্য অফিসে এমন বিতর্কিত কর্মকর্তার বারবার প্রত্যাবর্তনের পেছনের রহস্য কী?
এলজিইডি নেত্রকোনা : গ্রামীণ উন্নয়নের নামে ঘুষের কারখানা। নেত্রকোনার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রামীণ রাস্তা, অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে ঘুষ বাণিজ্যের ভয়াবহ অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন, প্রকল্প অনুমোদন থেকে শুরু করে বিল উত্তোলনের প্রতিটি ধাপে নির্ধারিত হারে ঘুষ দিতে হয়। এমনকি কাজের মান নিশ্চিত করা তো দূরের কথা, অনেক সময় বরাদ্দের টাকা উঠিয়ে কাজই হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় বিশিষ্টজনরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম অর্থনৈতিক ভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে।
পিডিবি নেত্রকোনা : ভূয়া বিল আর হয়রানির ফাঁদে সাধারণ মানুষ। নেত্রকোনার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে ফৌজদারি মামলা। ভুয়া বিল তৈরি, মিথ্যা মামলা দায়ের এবং সরল নাগরিকদের হয়রানির অভিযোগ এনে কিশোরগঞ্জ আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। অভিযুক্ত সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আগেও দুর্নীতি ও হয়রানির একাধিক অভিযোগ ছিল, যা রাজনৈতিক প্রভাবে বারবার ধামাচাপা পড়েছে বলে অভিযোগ জনসাধারণের। প্রশ্ন সবার : কে দেবে জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা? ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার চার শীর্ষ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এই ভয়াবহ অনিয়মের খবর সামনে আসার পর সচেতন নাগরিক সমাজ দাবি তুলেছে—দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি শুধু কথায় নয়, বাস্তবে দেখতে চায় জনগণ। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ বিভাগীয় তদন্ত এবং কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হচ্ছেন সকলে। কী বলছে দূদক? কোথায় প্রশাসনের নজরদারি? নাকি দুর্নীতি-লুটপাট অব্যাহতই থাকবে—প্রশ্ন থাকলো জনতার পক্ষ থেকে।



Discussion about this post