
নিজস্ব প্রতিবেদক।। গাজীপুরে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের ব্যুরো চিফ সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার ঘটনায় সাংবাদিক সমাজে নেমে এসেছে তীব্র শোক ও ক্ষোভের ঝড়।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় নগরীর ব্যস্ত চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটে।
“হারালাম এক সাহসী কণ্ঠ” উল্লেখ করে
পত্রিকার সম্পাদক খাইরুল আলম রফিক আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “তুহিন আমার পরিবারের মতো ছিল। অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সে সবসময় সোচ্চার ছিল। আজ আমরা এক সাহসী কণ্ঠ হারালাম। তার দুটি শিশু সন্তানকে নিয়ে তার পরিবার এখন কোথায় দাঁড়াবে?”তুহিন হত্যার বিচার যেন কোন নাটকে পরিণত না হয়।
শুক্রবার জুম্মাবাদ চান্দনা চৌরাস্তা জামে মসজিদের সামনের ঈদগাহ মাঠ্র এই বীর কলম যোদ্ধার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবি—দ্রুত জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।বিক্ষোভ ও ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল হত্যা মামলায় জড়িতদের গ্রেফতারের। ইতোমধ্যে ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও গাজীপুর প্রেসক্লাব এক যৌথ বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে— “তুহিন হত্যার বিচার দ্রুত না হলে সারা দেশের সাংবাদিক সমাজ কঠোর আন্দোলনে নামবে। এই হত্যাকাণ্ড মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বর্বর আঘাত।”
পুলিশের বিলম্বে আটকে ক্ষোভ প্রকাশ করে
সাংবাদিক শার্মীন সুলতানা মিতু বলেন, “পুলিশের বিলম্বিত পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে আমাদের কলম নামিয়ে রেখে রাজপথে অনশনেই বসতে হবে। দেশে এখন আন্দোলন ছাড়া কিছুই হচ্ছে না।”
সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল মন্তব্য করেন, “অন্য ঘটনায় প্রমাণ না থাকলেও আসামি ধরা হয়, কিন্তু তুহিন হত্যায় এত প্রমাণ থাকার পরও কাউকে গ্রেফতার করতে না পারা দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য।”
সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুলেছেন— “সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের এখনো কেন গ্রেফতার করা হয়নি? নাকি তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে? যদি সাংবাদিকরাই নিরাপদ না থাকে, তবে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ?”
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (অপরাধ উত্তর) রবিউল হাসান বলেন, তদন্ত চলছে, কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টহল জোরদার করা হয়েছে।
বাসন থানার ওসি জানান, তুহিন হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন ৫ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে মূল অভিযুক্তরা এখনো পলাতক।
শোকস্তব্ধ পরিবারের নিহত তুহিনের বড় ভাই সেলিম বলেন, “পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন নির্ভীক অনুসন্ধানী সাংবাদিক। অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করতেই হয়তো তাকে জীবন দিতে হয়েছে। তার মৃত্যুতে শুধু পরিবার নয়, পুরো সাংবাদিক সমাজ শোকে স্তব্ধ।”
গাজীপুরে প্রথম জানাজায় অংশ নেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি, বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের জনগণ।
এক লড়াকু কলম সৈনিকের বিদায়ে গাজীপুরসহ দেশের সংবাদমহল আজ শোকে নিমজ্জিত।



Discussion about this post