
বিশেষ প্রতিনিধি:- দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত, সুনিপুণ ভণ্ড প্রতারক বাহাউদ্দিন মৌলভীর নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা ও মিথ্যাচারে অতিষ্ঠ ফুলদীসহ আশপাশ এলাকার জনগণ! গাজীপুরের কালীগঞ্জের ফুলদী নিবাসী মরহুম কামাল বেপারীর বহুরূপী পুত্র বাহাউদ্দিন আহম্মদ। খুব অল্প বয়সে তিনি পিতৃহারা হলে, এলাকার জৈনক মুরুব্বি তাকে দুর্বাটি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ভর্তি করে দেন। এতিমখানায় থাকা অবস্থায়ই সে দুর্নীতি, প্রতারণা ও অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এখানে কোন পড়াশুনা বা জ্ঞান অর্জন না করে অন্য লোকের মাধ্যমে নিজের পরীক্ষা দেওয়াতো বাহাউদ্দিন! আর একের পর এক নিজের নামে সার্টিফিকেট অর্জন করতো সে। এই প্রতারকের কর্মজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায়। ফুলদী মাদ্রাসার সুপার থাকা অবস্থায় সে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে শিক্ষকদের বেতন উত্তোলনসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়। যা পরবর্তীতে তৎকালীন দুর্নীতি দমন সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে আসলে তিনি চাকরিচ্যুত হন। এসময় দীর্ঘদিন চাকরিহারা অবস্থায় তিনি বিভিন্ন লোকের সঙ্গে নানা ধরনের প্রতারণামূলক কাজ করে অর্থ হাতিয়ে নেন। চাকরি ফেরৎ পেতে তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন আওয়ামী ওলামা লীগের স্থানীয় সভাপতি পদ দখলে নেন এবং বড় ছেলে লাইলুলকে যুবলীগে এবং পুত্র শহিদুল ও আরেক পুত্রকে ছাত্রলীগে যোগদান করিয়ে পুরোপুরি আওয়ামী পরিবার বনে যান। প্রকৃত আওয়ামী লীগার হয়ে এলাকায় নির্দ্বিধায় অপকর্ম ও ক্ষমতার প্রভাব বুঝানোর জন্য প্রায় দিনই ফুলদী বাজার ও ভাটিরা রাস্তার মোড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জননেতা তারেক রহমান ও জিয়া পরিবারের সদস্যদের এবং সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলনকে নিয়ে অস্র্যব্য, কুৎসিত গালমন্দ করতেন এই বাহাউদ্দিন। তার ও তার ছেলেদের আওয়ামী ভক্তিতে স্থানীয় সাবেক এমপি, ফ্যাসিস্টের অন্যতম দোসর মেহের আফরোজ চুমকি’র বিশেষ নজর কাড়তে সক্ষম হয় বাহাউদ্দিন পরিবার। বিনিময়ে চুমকির সরাসরি হস্তক্ষেপে অল্প সময়ের মধ্যে দুদকের মামলা সহ সব অপকর্ম থেকে দায়মুক্তি লাভ করে পুনরায় চাকরিতে বহাল হন তিনি। এবার আটঘাট বেঁধে চুটিয়ে শুরু করেন অপকর্ম! সরকারী বিধি বিধান উপেক্ষা করে পত্রিকায় কোন প্রকার বিজ্ঞাপন না দিয়েই ফুলদী মাদ্রাসায় তার ছেলে ও মেয়েকে নিয়োগ দেয়া হয়। যা পুরোপুরি সরকারী ও শিক্ষা বিভাগের নীতিমালার পরিপন্থি। এখানেই শেষ নয়, বিগত ১০/১২ বছর ধরে মাদ্রাসার সব কিছু চলছে ‘বাহাউদ্দিন নীতিমালা’য়! পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে বাহাউদ্দিনের ইচ্ছায়। সাবেক এমপি চুমকির অবৈধ ক্ষমতার জোরে বাহাউদ্দিন ও তার ছেলেরা ফুলদীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। অন্যায় ভাবে নিরিহ মানুষের উপর অত্যাচার করা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। বক্তারপুর ইউনিয়ন ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার ইকবাল হোসেন সরোয়ারের নেতৃত্বে বাহাউদ্দিন পুত্র যুবলীগ নেতা লাইলুল, শহীদুল, মিরনের ছেলে রিটু, সালাউদ্দিন রানাসহ আরো বেশ কিছু ছাত্রলীগ- যুবলীগের নেতা কর্মীরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রফিজুল ইসলাম দর্জি ও ওয়ার্ড মেম্বার আমিনুল ইসলাম দর্জির বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
এছাড়া ফুলদী বাজার ও ছল্লার মোড়ে একাধিক ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত করা, ইউনিয়ন অফিসে হামলা ও ভাঙচুর, দাউদাপাড়ার কাদির পরিবারের একাধিক ব্যক্তির মাথা ফাটিয়ে জখম করে এই চক্র। ক্রমেই দানব হয়ে ওঠে তারা। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শহীদুল ও সালাউদ্দিন রানা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। আত্মগোপনে চলে যায় সরোয়ার মেম্বার। কিন্তু এত কিছুর পরও এখনো থেমে যায়নি বাহাউদ্দিন মৌলভীর কূটকৌশল ও অপতৎপরতা। বিগত কিছুদিন আগে সে তার নিজের গোয়াল ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বলে এলাকার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, মুলত বাহাউদ্দিন কোন অপকর্ম করার আগে একটি মাষ্টার প্ল্যান করে। সেই প্ল্যান অনুযায়ী সে এগিয়ে যায়। সে জানে তার অতীতের কুৎসিত ইতিহাস এলাকার ছোট বড় সবারই জানা। তাছাড়া বিগত আওয়ামী আমলে তার সব কর্মকাণ্ড এলাকাবাসীর মনে থাকায়, সে এবার সাধারণ মানুষের অনুকম্পা পেতেই নিজের গোয়াল ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
অনেকের মন্তব্য, হয়তো তার প্রতিবেশীদের শায়েস্তা করতেই এই প্ল্যান! কারণ হিসেবে তারা বলেন, বাহাউদ্দিন যে ঘরে থাকেন সে ঘর থেকে অনেক দূরে তার গোয়াল ঘর। কাজেই গোয়াল পুড়লেও তার কোন মৃত্যু ঝুঁকি বা ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে, গোয়াল ঘরটি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আকবর সরকারের বসত ঘরের অতি সন্নিকটে। নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত সূত্র মতে, আকবর ছুটিতে বাড়িতে আসায় কূটকৌশলী বাহাউদ্দিন গোয়াল ঘরটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়, যেন আকবরের পরিবারের সবাই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। কিন্তু রাতে আগুনের বিস্তার ও তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায়, তার কুটিল পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বাহাউদ্দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনা জানিয়ে থানায় জিডি এন্ট্রি করিয়েছে এবং টিভি প্রতিনিধিকে ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করায়। এতে এলাকাবাসীর কাছে পরিস্কার হয়ে ওঠে তার কু-পরিকল্পনা। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে বাহাউদ্দিন নিজ কন্যার স্বামীকে শায়েস্তা করতে জামাইয়ের বিরুদ্ধে মোবাইল চুরি ও নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা দায়ের করে। যা এখনো আদালতে চলমান। এর আগে বড় মেয়ের জামাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ আনেন বাহাউদ্দিন পরিবার। কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না এই পরিবারের অনৈতিকতার রথ। এসব কারণে এলাকাবাসী বাহাউদ্দিনের করাল ছোবলে কারো যেন কোন ক্ষতি না হয়, সেই লক্ষ্যে অতি দ্রুত তার সকল অপকর্মের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের জোর দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া বাহাউদ্দিন মৌলভী ও তার পরিবারের সদস্য এবং তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।



Discussion about this post