
শেখ মামুনুর রশীদ মামুন-বিশেষ প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ জুড়ে যখন মাদকের ভয়াল গ্রাসে যুবসমাজকে বাঁচাতে একঝাঁক সাহসী কর্মকর্তা-কর্মচারী দিন-রাত লড়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই তাদেরকেই সরিয়ে দেওয়ার নীল নকশায় ব্যস্ত একটি শক্তিশালী অপরাধ চক্র। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে—মাদক সিন্ডিকেট শুধু মাদক ব্যবসাই নয়, এখন সফল মাদকবিরোধী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গুজব,চরিত্রহনন আর বদলির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। ময়মনসিংহে সাম্প্রতিক সময়ে এই অপতৎপরতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর আমিনুল কবির,সিপাই মোঃ রাজু মিয়া,কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি,মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম,ডিবি ওসি মফিদুল ইসলাম থেকে শুরু করে অভিযানে সাফল্য অর্জনকারী বহু কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন মিথ্যা প্রচারণার শিকার। গুজব ও ভুয়া ভিডিওর ফাঁদে ফেলার অপচেষ্টাঃ অভিযান সফল হলেই একশ্রেণির মাদক ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। তারা বিভিন্ন পুরনো ভিডিও ক্লিপ এডিট করে নতুন করে সাজিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ৩-৪ মাস আগের ভিডিওকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করে দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। বিশেষ করে, সম্প্রতি ৩—৪ মাস আগে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের নগরীর ব্রিজ মোড়ে (সুরমার মাদক স্পটে) পরিচালিত অভিযানের পর থেকেই এমন ষড়যন্ত্র তীব্র আকার ধারণ করে। ঐ অভিযানে সিন্ডিকেট বড় ধাক্কা খাওয়ার পর থেকে তারা–মেধাবী পরিশ্রমী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চরিত্রহনন ও বদলির ফাঁদে ফেলতে সচেষ্ট হয়। একজন সচেতন নাগরিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—“যারা মাদকবিরোধী অভিযানে জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন, তারাই যদি গুজব আর ষড়যন্ত্রের শিকার হন,তবে ময়মনসিংহ কি আবার মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে?” সফলতার জন্যই টার্গেটঃ যেসব কর্মকর্তার প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গেছে, তারা মাদকবিরোধী মামলায় সবচেয়ে এগিয়ে। বরং তাদেরই বিরুদ্ধে বেশি গুজব রটানো হচ্ছে। কারণ, সিন্ডিকেটের কাছে এরা যেন ‘গলার কাঁটা’। তাদের সাফল্য মাদক ব্যবসায়ীদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছে। এক প্রবীণ সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন—“কেন বারবার মাদকবিরোধী হিরোদের বদলাতে হবে? এ কাদের ইশারায় হচ্ছে? এ ষড়যন্ত্রের দায় কে নেবে?” অর্থের বিনিময়ে সাংবাদিকতার নামে অপকর্মঃ অভিযোগ রয়েছে, টাকার বিনিময়ে কিছু নামধারী তথাকথিত সাংবাদিকও এ ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েছে। তারা ভিডিও ক্লিপ এডিট করে, মিথ্যা ক্যাপশন দিয়ে, গোপন চুক্তির বিনিময়ে মাদক সিন্ডিকেটকে সুবিধা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে শুধু সোসাল মিডিয়া বা সংবাদপত্রের মর্যাদা নষ্ট হচ্ছে না,রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ চক্রও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। রাষ্ট্রের কাছে আহ্বানঃ মাদকবিরোধী এসব সাহসী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিতর্কিত করার পাঁয়তারা রুখতে এখনই রাষ্ট্রকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সচেতন মহল বলছে—“আজ যদি তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়, তবে কাল মাদক সিন্ডিকেট আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তখন ময়মনসিংহ নয়, সমগ্র বাংলাদেশই পরিণত হবে মাদকের অভয়ারণ্যে।” যুবসমাজের ভবিষ্যৎ বনাম মাফিয়ার ষড়যন্ত্রঃ মাদকবিরোধী লড়াই থেমে গেলে যুবসমাজের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। এই লড়াই কেবল পুলিশের নয়, গোটা জাতির। রাষ্ট্র যদি তার সন্তানস্বরূপ দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, তবে এ দায় বহন করতে হবে পুরো জাতিকে। জ্বালাময়ী প্রশ্নগুলো আজ দেশের অন্তরে গুঞ্জন তুলছে: কেন মাদকবিরোধী সফল অফিসারদের সরাতে এত মরিয়া একটি চক্র? রাষ্ট্র কি এই ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে দমন করবে,নাকি নীরব দর্শক হয়ে থাকবে? যুবসমাজের ভবিষ্যৎ কি তবে টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে যাবে? মাদকবিরোধী যুদ্ধে যারা দেশের গর্ব হয়ে উঠেছেন, তাদের রক্ষা করা রাষ্ট্রেরই প্রথম দায়িত্ব। এখনই সময়— মাদক সিন্ডিকেটের চক্র ভেঙে দিয়ে, দেশপ্রেমিক অফিসারদের পাশে দাঁড়ানোর। অন্যথায় ইতিহাস কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেবে—“তখন তোমরা কোথায় ছিলে?”



Discussion about this post