
শেখ মামুনুর রশীদ মামুন–বিশেষ প্রতিনিধি:- বাংলা সমাজে নারী মানেই মমতা,বিশ্বাস ও নির্ভরতার প্রতীক। কিন্তু যখন সেই নারীই সমাজের যুবসমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেন, তখন প্রশ্ন ওঠে—এ কেমন সভ্যতা, এ কেমন মানবতা? ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায় গতকাল (২৭ আগস্ট) বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট থেকে ৫টা ৩০ মিনিটের মধ্যে পরিচালিত মাদকবিরোধী অভিযানে যে নারীকে আটক করা হলো, তার কোলে তখন একটি শিশু সন্তান। এ যেন এক হৃদয়বিদারক চিত্র! মামলার বিবরণঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬(১) এর সারণী ১০(ক)/৪১ ধারায় দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ আছে—আসামী রাশিদা আক্তার (২৮), স্বামী বাহারাম মিয়া, ভাড়াটিয়া হিসেবে মুক্তাগাছার মনিরামবাড়ীতে বসবাস করছিলেন। তল্লাশি চালিয়ে তার আলমারির ড্রয়ার থেকে উদ্ধার করা হয় ২৮৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৮৫ হাজার ৮০০ টাকা। তার ছোট ভাই, মো. রফিকুল ইসলাম হৃদয় (২৪), যাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে ইয়াবা সংগ্রহ ও সরবরাহের মূল হোতা হিসেবে, সে বর্তমানে পলাতক। হৃদয়বিদারক প্রশ্নঃ গ্রেফতারের সময় নারীর কোলে ছিল একটি শিশু। প্রশ্ন জাগে— সমাজ কি এখন এতটাই পচে গেছে যে মা হওয়ার পরও কেউ মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে? একটি নিষ্পাপ শিশু কি জন্মের মুহূর্ত থেকেই কলঙ্কের ভার বইতে বাধ্য? রাষ্ট্র কি এই শিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষার দায় নেবে, নাকি প্রশাসনের লাল কালিতে কেবল একটি মামলার ফাইলেই সীমাবদ্ধ থাকবে এই ঘটনা? সাক্ষী ও অভিযান দলের বর্ণনাঃ এসআই আল মাসুদের নেতৃত্বে গঠিত অভিযানে উপস্থিত ছিলেন এএসআই সুলতানা রাজিয়া, এএসআই মাইন উদ্দিনসহ একাধিক সদস্য। স্থানীয় দুই ব্যক্তি মো. খোরশেদ আলম ও মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই আসামীর আলমারির ড্রয়ার থেকে ইয়াবার প্যাকেট উদ্ধার হয়। জব্দ তালিকা প্রস্তুত ও সাক্ষীদের স্বাক্ষর গ্রহণ শেষে আলামত ও নমুনা সংরক্ষণ করা হয়। সমাজের আঘাতপ্রাপ্ত বিবেকঃ ঘটনাটি জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। মুক্তাগাছার সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন—“মাদকবিরোধী যুদ্ধে আমরা দিনরাত পুলিশের সাহসিকতার প্রশংসা করি। কিন্তু যখন দেখি, একজন নারী—যিনি মা—শিশুকে কোলে নিয়ে গ্রেফতার হচ্ছেন, তখন আমাদের সংস্কৃতির মমতা-ভালোবাসার প্রতীক নারীত্বই যেন কলঙ্কিত হয়। সমাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কী হবে?” বিশেষজ্ঞ মতঃ সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন,দারিদ্র্য,পারিবারিক ভাঙন ও অর্থলোভী চক্রের ফাঁদে পড়ে অনেক নারী আজ অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ছে। তবে শিশুকে নিয়ে এমন ঘটনায় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সুরক্ষার প্রশ্ন সামনে আসে। আইনজীবীরা মনে করছেন—“আসামী নারী হিসেবে দায়ী হবেন ঠিকই, কিন্তু তার শিশুর নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।” প্রতিবাদী সুরে শেষ প্রশ্ন: ইয়াবা যেমন ধ্বংস করছে যুব সমাজ, তেমনি এবার কি মায়ের কোলেও ছড়াচ্ছে সেই অন্ধকার? আইন তার নিজস্ব পথে চলবেই, কিন্তু এই শিশুটির অপরাধ কী? আমরা কি কেবল গ্রেফতার-জব্দ-আদালতের খবরেই সন্তুষ্ট থাকব, নাকি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমাজের ভেতরে পচন ধরানো মাদকের মূল শেকড় উপড়ে ফেলব? পত্রিকার পাতায় আজকের এই ঘটনা কেবল একটি মাদক মামলা নয়, বরং সভ্য সমাজের সামনে ছুঁড়ে দেওয়া এক ভয়ঙ্কর প্রশ্ন— “আমরা কি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ রেখে যেতে পারছি?”



Discussion about this post