
নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ জহিরুল হকের বিরুদ্ধে গাজীপুর আদালতে আবারও একটি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। উক্ত মামলাটি করেছেন একি মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: সাইদুর রহমান। মামলার এজাহার সূত্রে জানাগেছে ০১/০৮/২০২৪ তারিখে কাপাসিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার একজন উপাধ্যক্ষ পদে মো: সাইদুর রহমান যোগদান করেন ১৮/০৮/২০২৪ থেকে তিনি উক্ত মাদ্রাসায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে চাকুরী আসছেন। কিš‘ উক্ত মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ জহিরুল হক ২৭/০২/২০২৪ তারিখে অবসর গ্রহণ করেন । অবসর নেওয়ার পরও নিয়ম বর্হিভূতভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারো কথায় কর্ণপাত না করে অবৈধভাবে রেক্টর পদ সৃজন করে মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছেন। মামলার বাদী মো: সাইদুর রহমানের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারে বসতে না দিয়ে তিনি নিজেই চেয়ার দখল করে রাখে । এবং মামলার বাদীকে বলেন উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতে হলে ৬ লক্ষ টাকা দিতে হবে। না দিলে অধ্যক্ষ চেয়ারে বসতে পারবেন না। বাদী চাকুরীর কথা চিন্তা করে সাবেক অধ্যক্ষ জহিরুল হককে ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করে। উক্ত টাকা আসামী নিজেই ভোগ করে। এবং বাকী ৩ লক্ষ টাকা না দিলে চেয়ারে বসতে দিবে না বলে হুমকি প্রদান করে আসামী জহিরুল হক। তাছাড়া বাদী গত ১৮/০৮/২০২৪ তারিখে অত্র মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণের পর মাদ্রাসার প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র বুঝিয়ে দিতে বললে সাবেক অধ্যক্ষ জহিরুল হক বিভিন্ন রকম তালবাহানা করতে থাকে । শুধু তাই নয় সাবেক অধ্যক্ষ জহিরুল হক বর্তমানে রেক্টর পদ বহনকারী ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাব দেখিয়ে বাদীর নিকট বিভিন্ন কায়দায় চাঁদা দাবী করে বলে মামলার এজারে উল্লেখ করেছে । শুধু তাই নয় গত ০৭/০৭/২০২৫ তারিখ বিকাল ৪টায় আসামীসহ বেশকয়েকজন অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের নিয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রুমে প্রবেশ করে মামলা বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। উক্ত গালাগালির প্রতিবাদ করায় মামলার বাদীকে মারধর করতে থাকে। এবং বাকী ৩ লক্ষ টাকা দাবী করে টাকা না দেওয়া পর্যন্ত তাকে নির্যাতন করতে থাকে বলে মামলায় বলা হয়েছে।এদিকে একই মাদ্রাসার ইবতেদায়ি বিভাগের প্রধান শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলামের নিকটে জহিরুল হক তাঁর নিকট থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং এর মধ্যে দুই লাখ টাকা আদায় করেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (মামলা নং: ৬৯৩/২০২৪) মামলাটি দায়ের করে। উক্ত মামলায় গাজীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত কাপাসিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ জহিরুল হককে চাঁদাবাজির মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন
তদন্তের চাঞ্চল্যকর ফলাফল:
দীর্ঘ তদন্ত শেষে চলতি বছরের ১৬ মার্চ সিআইডি আদালতে ২২৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চাঁদাবাজির অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য প্রমাণ যথেষ্ট। পাশাপাশি আরও যেসব গুরুতর অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে, সেগুলো হলো— শিক্ষকদের বলপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা, শিক্ষক নিয়োগে অর্থ বাণিজ্য ও অবৈধ লেনদেন, অবসরের পর ‘রেক্টর’ নামে অবৈধ পদ সৃষ্টি করে প্রতিষ্ঠান দখলে রাখা, নিজের পক্ষে ম্যানেজিং কমিটি গঠনে জালিয়াতির মাধ্যমে আজীবন দাতা ভোটার হওয়া, নারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের যৌন হয়রানি ও অশালীন আচরণ, সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব খাটিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা।
¯’ানীয় প্রতিক্রিয়াঃ
ঘটনার পর কাপাসিয়ার শিক্ষা মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। ¯’ানীয় শিক্ষক ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, জহিরুল হক দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অনিয়ম চালিয়ে আসছিলেন।
একজন অভিভাবক বলেন, এমন একজন ব্যক্তি বহু বছর ধরে আমাদের সন্তানদের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছেন। তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেছেন এবং ¯’ানীয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য হিসেবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হয়রানিতে জড়িত ছিলেন।
দ্রুত বিচারের দাবিঃ সচেতন নাগরিক সমাজ, অভিভাবক ও শিক্ষকরা দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, এমন ঘটনা শিক্ষাঙ্গনে শুধু ভয় ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে না বরং শিক্ষার মান ও নৈতিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।



Discussion about this post