
শেখ মামুনুর রশীদ মামুনঃ ময়মনসিংহ নগরীর চায়না মোড় যেন এক অদৃশ্য আতঙ্কের নাম। এখানে ছাত্রলীগের পরিচিত নেতা মোশাররফ মন্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার দাপট, দখলবাণিজ্য,পরিবেশ দূষণ,সাংবাদিক নির্যাতন—সব মিলিয়ে এক বিতর্কিত চরিত্র হয়ে উঠেছেন তিনি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এত অভিযোগ থাকার পরও তিনি প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ী মহলে প্রভাব বিস্তার করছেন। প্রশাসনের নীরব ভূমিকা এখন জনমনে প্রশ্ন তুলছে—কেন এত অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তি এখনো গ্রেপ্তার হচ্ছেন না? ছাত্রলীগ স্থগিত, তবুও কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যক্রম স্থগিত থাকলেও মোশাররফ মন্ডল নিজের পরিচয় ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, তিনি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন, বিভিন্ন নির্বাচনে ভূমিকা রাখছেন। এতে প্রশ্ন উঠেছে—যখন ছাত্রলীগের কার্যক্রমই স্থগিত, তখন একজন নেতা কীভাবে এত ক্ষমতা ধরে রাখেন? অপরাধের অভিযোগের অন্ত নেই-স্থানীয়দের অভিযোগ, মোশাররফ মন্ডলের অপরাধ জগত বহুমুখী। চাঁদাবাজি: নগরীর ছোট-বড় ব্যবসায়ী ও প্রকল্পকেন্দ্রিক ঠিকাদাররা নিয়মিত তার দাবির শিকার হচ্ছেন। দখলবাণিজ্য: ফুটপাত থেকে শুরু করে খাস জমি পর্যন্ত দখলের অভিযোগ আছে। পরিবেশ দূষণ: নগরীর ভেতরে বালু ও পাথর মজুদ সহ ব্যাটারী পুরিয়ে সীসা তৈরী করে, পরিবেশ বিপর্যয় ঘটানোয় তার নাম এসেছে একাধিকবার। সাংবাদিক নির্যাতন: সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় কয়েকজন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড: রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের নামে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভয়-ভীতি দেখানো ও হামলার একাধিক ঘটনা আলোচিত।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্রতিনিয়ত আমরা তার চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছি। প্রতিবাদ করলে রাতারাতি দোকানে হামলা হয়। প্রশাসন সব জেনেও চুপ থাকে।” প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা! প্রশাসন কেন এত নীরব—এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন। সাধারণ মানুষ বলছে, সামান্য অভিযোগেই যখন নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন মোশাররফ মন্ডলের মতো প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে এত গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে। আমরা বিষয় গুলো খতিয়ে দেখছি।” তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সচেতন মহলের দাবি-এই নীরবতা শুধু প্রশাসনের দুর্বলতা নয়, বরং আইনের শাসনের প্রতি অবহেলা। তারা বলছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবিলম্বে মোশাররফ মন্ডলকে আইনের আওতায় আনতে হবে। একজন নাগরিক আন্দোলনকর্মী বলেন, “এই ধরনের নেতাদের কারণে সাধারণ মানুষ রাজনীতি থেকে বিমুখ হচ্ছে। প্রশাসন যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়, তবে তাদের দায় বহন করতে হবে।” জনমনে ক্ষোভ ও আতঙ্কঃ সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোশাররফ মন্ডলের নাম শুনলেই আতঙ্ক তৈরি হয়। অনেকে মুখ খুলতে চান না, ভয় পান প্রতিশোধ মূলক হামলার। আবার কেউ কেউ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “এই দেশে কি শুধু গরিব মানুষকেই গ্রেপ্তার করা হয়? বড় অপরাধীদের কি আইনের হাত পৌঁছায় না?” সরকারের টনক না নড়লে কী হবে? জনগণ এখন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের ব্যর্থতা শুধু একটি ব্যক্তির অপরাধকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে না, বরং পুরো সমাজে অন্যায়কে বৈধতা দিচ্ছে। সচেতন মহল সতর্ক করে বলেছেন, “এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হবে। প্রশাসনকে এর জবাব কড়া গলায় দিতে হবে।”



Discussion about this post