
নিজস্ব প্রতিবেদক:- গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) দায়িত্বশীল পদে পরিবর্তনের পর নগরবাসীর মনে ফিরেছে নতুন স্বস্তি। জিএমপি’র সাবেক কমিশনার ডা. নাজমুল করিমকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে সংযুক্ত করার পর ভারপ্রাপ্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান। গত ২ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন, তাতে নগরবাসী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান। সূত্র জানায়, সাবেক কমিশনার ডা. নাজমুল করিম খান ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, অপহরণ এবং হত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। নগরবাসী তখন প্রতিদিন আতঙ্কে দিন কাটাতো। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সমাজ, শিক্ষার্থীরা এবং অভিভাবকেরা ছিলেন নিরাপত্তাহীনতায়। হুমকীর মুখে ছিল গাজীপুরে ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরাও। একারণেই সাবেক কমিশনারের শৃঙ্খলা পনিপন্থী, অনিয়ম ও দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডের কারণে জাতীয় একাধিক সংবাদপত্রে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গাজীপুর নগরের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি উঠে আসে। পরে উপর মহলের নির্দেশে তাঁকে সরিয়ে হেডকোয়ার্টার্সে সংযুক্ত করা হয়। ভারপ্রাপ্ত কমিশনার হিসেবে মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নগরীর আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেন। তিনি মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে অপরাধ দমন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। পাশাপাশি টহল ব্যবস্থা জোরদার, গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চেকপোস্ট বৃদ্ধি এবং মাদক ও চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা শুরু করেন। এর ফলে দৃশ্যমান হয় গাজীপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পরিবর্তন। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই নগরীতে চুরি, ছিনতাই, মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষও এই পরিবর্তন সরাসরি অনুভব করছে। ফলে নাগরিক জীবনে ফিরেছে স্বস্তি। তবে জিএমপি বর্তমানে নানা সংকটের মধ্য দিয়েই কাজ করছে। পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, সদর দপ্তরসহ বেশ কয়েকটি থানা এখনো নিজস্ব ভবন নেই। অস্থায়ী স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এর পাশাপাশি জনবল সংকট একটি বড় সমস্যা। বর্তমান লোকবল দিয়ে নগরীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জনগণের প্রত্যাশিত সেবা দিতে গিয়ে পুলিশকে নানামুখী বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। তবে ইতোমধ্যেই জনবল নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র বলছে, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কমিশনার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর নিরপেক্ষতা, দৃঢ়তা এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে নগরবাসীর মনে আস্থা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ী সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষও বলছে, তাঁরা এখন আগের তুলনায় অনেকটা নিরাপদ বোধ করছেন। রাতের বেলায় চলাচল করা, ব্যবসা-বাণিজ্য করা কিংবা সামাজিক কর্মকাণ্ড আয়োজন সবক্ষেত্রেই মানুষের মাঝে ফিরে আসছে স্বাভাবিক পরিবেশ। এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম হাসান জানান, “জনবল সংকট ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে দায়িত্ব পালনে নানা বিড়ম্বনা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সহযোগী হলো নগরবাসী। জনগণ ও সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা পেলে গাজীপুরকে আরও শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।”



Discussion about this post