
আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :- নাটোরে গত বছর সোনালি রঙের ধান দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা সবার নজর কেড়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবার নাটোরে তৈরি হয়েছে সোনালি পাটের দুর্গাপ্রতিমা। দেখে মনে হচ্ছে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দেবী দুর্গাকে। এই উদ্যোগ ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে জেলা এবং জেলার বাইরে । ২০ কেজি সোনালী পাটের বুননে তৈরি এই দুর্গার পূজা হবে নাটোর শহরের লালবাজার কদমতলার রবি সূতম সংঘের মন্ডপে।
প্রতিমাটি তৈরি করেছেন লালবাজারের প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পালের নেতৃত্বে চার সদস্যের শিল্পী দল। গতবার তারা তৈরি করেছিলেন সোনালি ধানের দুর্গাপ্রতিমা। সেই পূজা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পাটের তৈরি দুর্গাপ্রতিমা নজর কেড়েছে সবার। দর্শনার্থী-ভক্তরা প্রতিদিন ভিড় করছেন লালবাজারে। সেখানে রঙ-তুলির আঁচড়ে সেজে উঠছেন দেবী দশভূজা।
একইভাবে তৈরি করা হয়েছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর এমনকি সিংহও। শাড়ি এবং অলংকার সবকিছুতেই পাটের সূক্ষ্ম আঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য প্রায় ২০ কেজি সোনালি পাট লেগেছে।
প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল বলেন, বংশপরম্পরায় তাঁরা প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। প্রতিবছরই আয়োজকেরা প্রতিমায় নতুনত্ব চান। নতুন কিছু করার অনুরোধ করেন। গত বছর ধানের প্রতিমা তৈরি করা করা হয়েছিল। সবাই সেটি পছন্দও করেছিল। এবার রবি সূতম সংঘ তাদের মণ্ডপের জন্য সোনালি পাটের বুননে দিয়ে মোড়ানো প্রতিমা তৈরির নিয়ে কথা হয়। কাজটা খুব সহজ নয় জেনেও তিনি কাজটি শুরু করেন।
এই প্রতিমাশিল্পী আরও বলেন, প্রায় দুই মাস আগে এই মন্ডপের দুর্গাপ্রতিমা তৈরির জন্য প্রথমে কাঠ, বাঁশ, পাট ও বিচালির কাঠামো তৈরি করা হয়। পরে তাতে মাটি দিয়ে প্রতিমার আকৃতি আনা হয়। মাটি শুকিয়ে যাওয়ার পর মাটির ওপর সোনালি পাট দিয়ে বুনন করা হয়। এর পর দেখে মনে হচ্ছে, প্রতিমাটি সোনালি আঁশে মোড়ানো হয়েছে। সোনালি পাটের বুননের কাজটা খুবই চ্যালেঞ্জের। এজন্য ২০ কেজি সোনালি পাট ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর রংতুলির আঁচড়ে চোখ-মুখসহ পুরো প্রতিমার আদিরূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তিনি আশা করেন, এমন শৈল্পিক কারুকাজে মুগ্ধ হবেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।
আলোচিত এই সোনালি পাটের দুর্গাদেবী পূজিত হবেন লালবাজারের কদমতলা রবি সুতম সংঘের মন্ডপে।
রবি সুতম সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ রায় বলেন, ভক্তদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে, রবি সুতম সংঘ, প্রতিবছর ভিন্ন রকম প্রতিমা তৈরি করানোর চেষ্টা করে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত বছর ধানের তৈরি প্রতিমায দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এ বছরেও আশা করছি পাট দিয়ে তৈরি প্রতিমা দর্শন করে, ভক্তরা খুশি হবেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রতিমা প্রতিবছর নিখুঁত যত্নের সাথে বিশ্বজিৎ পাল তৈরি করেন। পাট দিয়ে প্রতিমা তৈরির এই ইউনিক আইডিয়াটা তিনিই দিয়েছেন। এ বছর নাটোরে ৩৬৮টি মন্দির ও মন্ডপে দুর্গাপূজা হবে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট খগেন্দ্রনাথ রায় বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছরে ১৪ টি পূজা বেশি হচ্ছে। প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষের সভায় পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী সার্বিকভাবে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে। তবুও দুষ্টুদের কথা তো বলা যায় না, যেকোনো সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাতে না ঘটাতে পারে, সেই জন্য প্রতি পূজা মণ্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন এবার নাটোরে নির্বিগ্নে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, নাটোর একটি শান্তিপ্রিয় জায়গা। অপ্রীতিকর কোন ঘটনা কখনও হয়নি নাটোরে। পূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হলেও উৎসব আমরা সবাই একসাথে উদযাপন করি।



Discussion about this post