মো. মেহেদী হাসান:
সম্প্রতি গাজীপুরের ৫২টি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ উপযোগিতা নিশ্চিত না হয়ে বেআইনিভাবে পাঠদানের অনুমতি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে গাজীপুরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। পক্ষান্তরে অনিবন্ধিত বা পাঠদানের অনুমতিহীন এবং অনুপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রাথমিকের মহাপরিচালক ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।
বিদ্যালয় নিবন্ধন বা পাঠদান অনুমতি দেওয়ার প্রথম শর্ত হলো, ‘বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন অধ্যাদেশ, ১৯৬২’-এর ৪(২) ধারা অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের ভবন ও প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ প্রতিপালনসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যে ৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ভূঁইয়া পাঠদানের অনুমতি প্রদান করেছেন, সে সকল প্রতিষ্ঠানের ইমারত বা ভবনের কোনোটিরই বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য অনুমোদন বা উপযোগিতা নেই। এছাড়া বেশ কিছু বিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসম্মত প্রাঙ্গণ তথা ভবনের চারপাশে বা অভ্যন্তরের খোলা জায়গা, যেখানে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা, সমাবেশ ইত্যাদি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই।
‘বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন আইন, ১৯৫২’-এর ধারা ৩(ক) অনুযায়ী, কোনো ভবন যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে বা অনুমোদিত উদ্দেশ্যের বাইরে ব্যবহার করা নিষেধ এবং শাস্তিযোগ্য। শাস্তি হিসেবে কর্তৃপক্ষ সেই ভবন অপসারণ বা ভেঙে ফেলারও নির্দেশ দিতে পারেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঠদান অনুমতিপ্রাপ্ত ৫২টি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই ‘বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন আইন, ১৯৫২’ তথা ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)’ মেনে অকুপেন্সি টাইপ ‘বি’ (এডুকেশনাল ফ্যাসিলিটিজ) শ্রেণির ভবন হিসেবে তৈরি করা হয়নি এবং যথাযথ অকুপেন্সি সনদ গ্রহণ ছাড়াই ব্যবহৃত বা পরিচালিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে, বেশিরভাগ ভবনই বিএনবিসি’র যথাযথ মান না মেনে আবাসিক ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হয়েছিল; যা বিদ্যালয় হিসেবে পরিচালনার জন্য প্রচলিত আইন অনুযায়ী অবৈধ, অনুপযোগী ব্যবহার ও ঝুঁকিপূর্ণ!
স্থানীয় ভবন বা ইমারত কর্তৃপক্ষ ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মাননান জানান,
‘আমার আওতাধীন এলাকায় আমাদের কাছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনের অনুমতির কোনো আবেদন পড়েনি।’
এছাড়াও তিনি জানান, ‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কোনো ভবনে বিদ্যালয় পরিচালনার আইনগত সুযোগ নেই, বরং তা অবৈধ এবং ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে।’
ভবন সংক্রান্ত দেশের প্রচলিত আইন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ ভবনগুলোকে বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য অনুপযোগী ও অবৈধ বললেও শিক্ষা অফিসার হিসেবে আপনি কীভাবে এই ভবনগুলোকে বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য উপযোগী হিসেবে নিশ্চিত হয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে গাজীপুরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ভূঁইয়া হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন,
‘আইনে যদি অনুপযোগী হয় তাহলে আমি এই বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান বাতিল করে দিব।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএনবিসি অনুযায়ী উপযোগী ভবনে বিদ্যালয় পরিচালিত না হলে বিদ্যালয়ের সম্ভাব্য ঝুঁকি:
এই ঝুঁকিগুলো শুধু দুর্ঘটনা নয়, বরং শিক্ষার মান, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং প্রতিষ্ঠানের আইনি অবস্থানের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ রুহুল আমিন রতন | মোবাঃ ০১৯১৫-০৯১৫২৯ , ০১৮৫৮-৩১০৮৩৫