
আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :- স্বর্ণালঙ্কারের লোভে পারিবারিক ক্ষোভ থেকে নাটোরের বড়াইগ্রামে দাদিকে টর্চ লাইট দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে নাতনির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তথ্য প্রযক্তির সহয়তায় ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার সময় বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে নাতনি ফৌজিয়া ও নাত জামাই মনিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বড়াইগ্রামে মমতাজ বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধাকে হত্যার রহস্য তিনদিনের মধ্যে উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বেলা ১১টায় নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। গ্রেপ্তার নাতনি ফেীজিয়া খাতুন (১৯) বনপাড়া পৌর এলাকার শাহিনুজ্জামান শাহিনের মেয়ে এবং নাত জামাই বড়াইগ্রাম উপজেলার মিনারুল ইসলাম (২৫) বড়াইগ্রাম উপজেলার মালিপাড়া গ্রামের ওয়াহেদুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফৌজিয়াকে খুব ভালোবাসতেন দাদি মমতাজ বেগম। কিন্তু প্রথম স্বামীকে তালাক দিয়ে ইলেকট্রিশিয়ান মিনারুল ইসলামকে দ্বিতীয় বিয়ে করলে দাদির সঙ্গে ফৌজিয়ার সম্পর্কের অবনতি হয়। এ ছাড়া বাড়িতে জিনিসপত্র চুরির কথা জানতে পেরে ফৌজিয়াকে বকাঝকা করে তার বাড়িতে আসতে নিষেধ করেন তিনি।
স্বামীর মৃত্যুর পর মমতাজ বেগম একাই এই বাড়িতে থাকতেন। তবে তার জন্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত ছিল দুজন গৃহকর্মী। তার দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে জাকির হোসেন মঞ্জু স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পৈতৃক বাড়ির অদূরে বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র সংলগ্ন বাবার রেখে যাওয়া আরেকটি বাড়িতে বসবাস করেন এবং মেয়ে বেবি আক্তার পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন।
তাকে সারা দিন দেখাশোনা করতেন গৃহকর্মী সুফিয়া বেগম (৪০) এবং রাতে প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেন কাজী আবু শামা (৬০)।
তিনি আরো বলেন, ‘গত রবিবার ঘটনার দিন সাংসারিক কাজ সেরে সন্ধ্যায় চলে যান গৃহকর্মী সুফিয়া। প্রহরী আবু শামা সরদারপাড়া জামে মসজিদে এশার নামাজ আদায় করে ওই বাড়িতে ফিরে এসে দেখেন মমতাজ বেগম রক্তাক্ত অবস্থায় নিজ ঘরের মেঝেতে পড়ে আছেন এবং তার মুখমণ্ডল থেঁতলানো। তিনি চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকলে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে এবং দ্রুত বনপাড়া পাটোয়ারী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরে জেলা পুলিশ ক্লুলেস এই মামলাটির রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে।
তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা এবং নিবিড় অনুসন্ধানে পুলিশ ঘটনার সময় ফৌজিয়ার দাদির বাড়িতে অবস্থান শনাক্ত করে। এর মধ্যে পুলিশ সংবাদ পায় ফোজিয়া তার স্বামী মিনারুলকে নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যাচ্ছেন। পরে পুলিশ হরিশপুর বাস টার্মিনাল থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে তাদের দুজনকে আটক করে। পরে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ফৌজিয়া তার দাদিকে হত্যার কথা স্বীকার করে।’
ফৌজিয়া জানান, বুধবার রাত সাড়ে আটটায় দাদির বাসায় গেলে তিনি ফৌজিয়ার সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেন এবং বাসায় আসতে নিষেধ করেন। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি তিন ব্যাটারির টর্চ লাইট দিয়ে দাদির মুখে উপর্যপুরি আঘাত করেন এবং দাদিকে হত্যার পরে তার দুই হাতে থাকা স্বর্ণের বালা-চুড়ি, আঙ্গুলে থাকা তিনটি সোনার আংটি ও গলার চেইন খুলে নিয়ে পালিয়ে যান। পরে তার স্বামী মিনারুল তিন ভরি ওজনের সোনার চেইন নাটোর শহরে সোনার দোকানে বিক্রি করেন। পরে সেই স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে নতুন কাপড়-চোপড় কিনে লাগেজে ভরে বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকায় যাওয়ার জন্য হরিশপুর বাস স্ট্যান্ডে আসেন। সেখান থেকে থানা পুলিশ তাদের আটক করে।’
পুলিশ সুপার জানান, এ বিষয়ে ফৌজিয়া ও তার স্বামী মিনারুল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদানের পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারমিন মাহমুদ নেলীসহ পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



Discussion about this post