
আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :- নাটোরের লালপুরে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাবা ও তার মেয়ে। একই সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন দুইজন। আশ্চর্যের বিষয় হলো— ফলাফলে মেয়েকে পেছনে ফেলে এগিয়ে আছেন বাবা আব্দুল হান্নান। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বাবা পেয়েছেন জিপিএ–৪.৩৩ এবং তার মেয়ে হালিমা খাতুন জিপিএ–৩.৭১ অর্জন করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর তাদের এই সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা বাবা–মেয়ের এই সফলকায় প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানায়, গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের লাল মিয়ার ছোট ছেলে আব্দুল হান্নান ১৯৯৮ সালে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। এরপর সংসার জীবনে মনোযোগ দিলেও তার শেখার আগ্রহ কখনও নিভে যায়নি। দীর্ঘ ২৫ বছর পর, ২০২৩ সালে রুইগাড়ি হাই স্কুল থেকে পুনরায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেন তিনি। তখন কাউকে না জানিয়ে নিজের মেয়ের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নেন এবং ফলাফল প্রকাশের পর এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। পরবর্তীতে ২০২৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় আব্দুল হান্নান অংশ নেন বাঘা কাকড়ামারি কলেজ থেকে, আর তার মেয়ে হালিমা খাতুন অংশ নেন গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে। ফলাফলে দুজনেই উত্তীর্ণ হয়ে প্রমাণ করেছেন, বয়স কখনো শিক্ষার বাধা নয়। মেয়ে হালিমা খাতুন বলেন, “পরিবারে দারিদ্র্য থাকলেও বাবার পড়াশোনার ইচ্ছাশক্তি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা চাই, একসঙ্গে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে।” বাবা আব্দুল হান্নান বলেন, “ছোটবেলায় দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি। মেয়েকে পড়াতে গিয়ে নিজের পড়ার আগ্রহ ফিরে পাই। বয়স কোনো বাধা নয়, ইচ্ছা থাকলে শেখা সম্ভব—আমি সেটাই প্রমাণ করেছি।” লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, “এটি সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক একটি ঘটনা। একসঙ্গে বাবা-মেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন—এটি সমাজে শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।



Discussion about this post