
বিশেষ প্রতিবেদক: ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ, জাল শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরি হাতিয়ে নিয়েছেন ভোলা জেলার লালমোহনে কর্মরত সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে তিনি বনে গেছেন কোটি টাকার মালিক।
গোপন সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৭ ডিসেম্বর ভুয়া সনদ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে তিনি সাব-রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন। এরপর থেকে ভোলার তজুমুদ্দিন, আমতলী, মঠবাড়ীয়া, পিরোজপুর, নড়াইল, নোয়াখালী, বগুড়া, গাইবান্ধা, কালামপুরসহ একাধিক স্থানে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ৫ মার্চ ২০২৫ তিনি ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে চাকরি: তদন্তে জানা গেছে, মঞ্জুরুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৬ জুন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর ৯ মাস। তবুও “মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী” পরিচয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পান এবং ওই সনদে চাকরি লাভ করেন। শুধু তিনিই নন, একইভাবে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সালে জন্ম নেওয়া আরও অন্তত ২৭ জন সাব-রেজিস্ট্রার বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ঘুষ ও রাজনৈতিক প্রভাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন মন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ ঘুষ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল।
দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য: কালামপুর ও লালমোহন রেজিস্ট্রি অফিস: কালামপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত অবস্থায় মঞ্জুরুল ইসলাম ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী নকলনবিশ পারুল আক্তার ও তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত টি.সি. মোহরার আব্দুস সাত্তার মিলে একটি দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেট দলিল লেখকদের জিম্মি করে প্রতিটি রেজিস্ট্রেশন থেকে ঘুষ আদায় করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চলতি অর্থবছরে দলিল নং ১৩৪৬, ৭৫২, ১০৮৬, ১১৫৬ ও ২১৩৭ নম্বর দলিলগুলোতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে। সরকারি কোষাগারে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব না গিয়ে গেছে সিন্ডিকেটের পকেটে।
অভিযোগে নারী কেলেঙ্কারির ছায়া: দলিল ও ঘুষ কেলেঙ্কারির পাশাপাশি সাব-রেজিস্ট্রার মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও উঠেছে। নকলনবিশ পারুল আক্তারের সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়েও একাধিক সূত্র অভিযোগ তুলেছে।
দুদক নীরব কেন? দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) কিছু সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও, মঞ্জুরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা প্রভাব খাটিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তদন্ত থেকে রেহাই পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মঞ্জুরুল ইসলামের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
একজন সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে রাষ্ট্রীয় পদে থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের অপব্যবহার, ঘুষ-দুর্নীতি, রাজস্ব ফাঁকি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির এমন ভয়াবহ চিত্র প্রশাসনের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কাছে অনুরোধ— এ বিষয়ে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এ ব্যাপারে সাব রেজিষ্ট্রার মঞ্জুরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগযোগ করলে তিনি বলেন পারুল আমার বান্ধবী কিন্তু তাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষ খারাপ মন্তব্য করে আমাকে হেও প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে। তিনি বলেন আমি আর সাংবাদিকদের টাকা দিতে পারবো না আমার বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করলে সাংবাদিকরা করুক। আমি পারুলের সাথে যা খুশি তাই করবো এটা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত ব্যাপার যে আমার পরিবারও জানে।



Discussion about this post