বশিরুল আলম, আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা :- বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে সম্প্রতি “ফ্যাসিস্ট কর্মকাণ্ডে জড়িত” অভিযোগে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর দেশজুড়ে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। ঠিক এমন উত্তাল পরিস্থিতিতেই আলমডাঙ্গায় গ্রেফতার হলেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অন্যতম স্থানীয় নেতা ও আলমডাঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল হক। রবিবার সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বাড়ি ও আশপাশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।
আশরাফুল হক আলমডাঙ্গার গোবিন্দপুর গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে। কলেজ জীবনের শুরু থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত সোলাইমান হক জোয়ার্দার সেলুনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তিনি বড় হন সংগঠনের ভেতরেই।
কলেজ ক্যাম্পাসে তার সক্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।
এমন একজন নেতার গ্রেফতার হওয়ায় শিক্ষাঙ্গন ও স্থানীয় রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র আলোড়ন।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এসব সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে একের পর এক অভিযানের মধ্যেই এবার স্থানীয় পর্যায়ে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে আশরাফুলের গ্রেফতারকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে—“আইনগত প্রয়োজনেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।” তবে অভিযোগের ধরন স্পষ্ট না করায় জনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা—নিষিদ্ধ সংগঠনের দায়িত্বশীল পদে থাকা কি মূল কারণ? নাকি পূর্বের কোনো অভিযোগ বা রিপোর্টের ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ? সরকারের তরফ থেকে কি ছাত্রলীগ কাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার সূচনা এটি?
আলমডাঙ্গা কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন—
“রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি দৃঢ় ছিলেন, কিন্তু ব্যক্তিগত আচরণে নম্র মানুষ। গ্রেফতারের খবরটি ছাত্রসমাজকে নাড়া দিয়েছে।”
অনেকে মনে করেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতা হওয়াই তাকে টার্গেট করেছে।
আশরাফুলের গ্রামে শোক, বিস্ময় ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন—“ছেলেটা রাজনীতি করত, কিন্তু খারাপ কিছু করার কথা কেউ বলতে পারবে না। সময় পাল্টেছে—এটাই তার শিকার।”
পরিবারের দাবি—“ন্যায়বিচার চাই। রাজনীতি করেছে, কিন্তু অপরাধী নয়।”
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর নেতৃত্বশীল তরুণদের গ্রেফতার দেশব্যাপী নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে—ছাত্রলীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতাকে আটক করে সরকার জানিয়ে দিল—সংগঠন নিষিদ্ধ মানেই তার সব স্তরই নজরদারির আওতায়। আলমডাঙ্গায় আওয়ামী ঘরানার রাজনৈতিক প্রভাব কিছুটা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা। নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তরুণরা এখন ‘স্টেট রিস্ক’-এর মুখে—পদ, পরিচয় ও ভবিষ্যৎ সবকিছুই অনিশ্চিত। আসন্ন দিনগুলোতে আরও গ্রেফতার হতে পারে—এমন আশঙ্কা স্থানীয় পর্যায়ে দৃঢ় হচ্ছে।
আশরাফুল হকের গ্রেফতার আলমডাঙ্গার রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকা একজন তরুণ নেতা এখন আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি।
একমাত্র প্রশ্ন—এই গ্রেফতার কি রাজনৈতিক পরিবর্তনের অংশ, নাকি আইনগত বাধ্যবাধকতা? উত্তর মিলবে তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ রুহুল আমিন রতন | মোবাঃ ০১৯১৫-০৯১৫২৯ , ০১৮৫৮-৩১০৮৩৫