
নিজস্ব প্রতিবেদক:: গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০২৪ সালের ১২ এপ্রিল গাজীপুর জেলা পরিষদে যোগদানের পর থেকেই খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী নানা অনিয়মের মাধ্যমে তিনিসহ মায়ের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় সাত কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকার এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন। তিনি মাত্র ১৭-১৮ বছরের চাকরিজীবনে এত বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া সন্দেহজনক এবং এটি তদন্তযোগ্য বিষয়। গাজীপুর সোনালী ব্যাংক কোর্ট বিল্ডিং শাখায় সম্প্রতি এক কোটি টাকার নতুন এফডিআর করার সময় তিনি নিজ অফিসে ব্যাংক ম্যানেজারকে আমন্ত্রণ জানান।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, জেলা পরিষদের অনুদানের টাকা বিতরণেও ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। তিনি যোগদানের পর প্রায় চার শতাধিক ব্যক্তির অনুকূলে অনুদানের চেক ইস্যু করা হয়, যার একটি বড় অংশ তাঁর নিজ জেলা লালমনিরহাট ও আশপাশের এলাকায় বিতরণ করা হয়। এসব অনুদানের বিপরীতে পঞ্চাশ থেকে ষাট শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়, যা তাঁর ড্রাইভার মাহমুদুল হাসানের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হতো। এভাবে তিনি অনুদান খাত থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি ড্রাইভারের পরিবারের সদস্যদের নামেও অনুদানের চেক ইস্যু করা হয়েছে।
প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার নাস্তা ও চা-বিস্কুট সরবরাহ করা হলেও, তিনি মাসে ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করেছেন। ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জেলা পরিষদ প্রায় ৫০ কোটি টাকার দুই হাজার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। অভিযোগকারীদের দাবি, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে তিনি প্রায় ৩০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন। যেসব ঠিকাদার বা কমিটির সদস্য ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, তাঁদের বিল ১৫ মাস ধরে আটকে রাখা হয়েছে। বর্তমানে পরিষদের প্রায় ১৮০০টি প্রকল্পের বিল বকেয়া রয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৪৭ কোটি টাকা।
এছাড়াও টঙ্গী, শ্রীপুর ও কালিয়াকৈরে জেলা পরিষদের জমি লিজ নবায়নের সময় অনেককে ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয়। যারা ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানান তাদের ফাইল আটকে রেখেছেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী তাঁর প্রভাব খাটিয়ে যে কর্মচারী তাঁর অনৈতিক কাজে বাধা দেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক লেলিয়ে দেন। তাঁর নির্দেশ ব্যতীত কেউ কোনো নথি উপস্থাপন করতে পারেন না। ব্যত্যয় ঘটলে তাঁদের হুমকি ও বদলির ভয় দেখানো হয়।
গত ১৫ মাসে তিনি সর্বাধিক ৩০টি প্রকল্প সাইট পরিদর্শন করেছেন। অথচ মাসে ১০ থেকে ১২ দিন প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিয়মিত ভ্রমণ বিল উত্তোলন করেছেন। এভাবে প্রায় তিন লাখ টাকার বিল আত্মসাৎ করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, অফিসে ভয়ভীতির সংস্কৃতি চলছে। কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না। এই কর্মকর্তা প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে পুরো জেলা পরিষদকে অচল করে ফেলেছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের যৌথ উদ্যোগে নিরপেক্ষ তদন্ত হলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
গত শনিবার (৮ অক্টোবর) রাতে গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলীর হাত-পা ও শরীর ম্যাসেজ করার একটি ভিডিও ধারণ করায় তারই কেয়ারটেকার জুয়েলকে বেধড়কভাবে পেটায় এবং রক্তাক্ত জখম করেন। মুদাচ্ছির বিন আলীর শরীর ম্যাসেজ ও জুয়েলকে রক্তাক্ত জখমের একটি ভিডিও এ প্রতিবেদকের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন মন্ত্রণালয়ে ভুয়া ফাইল অনুমোদন করতে গেলে মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমাকে জানায়। কেয়ারটেকার জুয়েলকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা, গত কয়েক দিন থেকে জুয়েলকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।



Discussion about this post