
নিজস্ব প্রতিবেদক :: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত টঙ্গী অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিনজনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলার আসামিরা হলেন টঙ্গী থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন মনি সরকার, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক সম্পত্তি কর্মকর্তা নুরুজ্জামান মৃধা। গত মঙ্গলবার (১৮) নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় গাজীপুরের সহকারী পরিচালক এনামুল হক বাদী হয়ে দণ্ডবিধিরি ৪০৯/১০৯/৫১১ সহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন, যার মামলা নম্বর ২(১১/২৫)। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদক গাজীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুল হোসাইন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে টঙ্গী রোডে অস্থায়ী পশুর হাট ১ কোটি টাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুহুল আমিন মনি সরকারকে ইজারা দেওয়া হয়। সরকারি নিয়মে দাখিলকৃত ইজারা মূল্যের ৩০% অর্থ জামানত হিসেবে ত্রিশ লাখ টাকার পে-অর্ডারসহ দরপত্র দাখিল করেন মনি সরকার। পরে সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান সরাসরি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে পরস্পর যোগসাজশে ইজারার অবশিষ্ট ৭০ লাখ টাকা ইজারাদারের নিকট থেকে আদায় না করে রুহুল আমিন মনি সরকারকে টঙ্গী ইজারা আদেশ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে ২০২০ সালের সালের ৭ নভেম্বর উক্ত টাকা আদায়ে নোট শীট/আদেশ ফর্দে নোটিশ প্রদান করার অনুমোদন হওয়া সত্ত্বেও মোস্তাফিজুর রহমান এবং নূরুজ্জামান মৃধা অর্থ আদায়ে কোন নোটিশ প্রদান করেননি বা ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি এমনকি টাকা আদায়ের কার্যকরী কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
সরকারি হাট-বাজাসমূহের ব্যবস্থাপনা, ইজারা পদ্ধতি এবং উহা হতে প্রাপ্ত আয় বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালা অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের পর দরপত্র অনুমোদনের ৩ (তিন) কার্যদিবসের মধ্যে অনুমোদিত দরদাতাকে জানাতে হবে। দরপত্রদাতা অবহিত হবার পর ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে দরপত্রের সাথে দাখিলকৃত জামানতের ২৫% অর্থ সমন্বয় করবে। ইজারার অবশিষ্ট ৭৫% অর্থ সেইসাথে ১৫% ভ্যাট ও ৫% আয়কর পরিশোধ করবেন। অন্যথায় তার দরপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে ও জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
সম্পূর্ণ টাকা (আয়কর ও ভ্যাটসহ) সরকারের নির্দিষ্ট খাতে জমা দেওয়ার পর চুক্তিনামার মাধ্যমে হাট-বাজারের দখল বুঝিয়ে দিবেন। কিন্তু টঙ্গী রোড অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইজারার নীতিমালা লঙ্ঘন করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ/অনুমোদনকে তোয়াক্কা না করে অসৎ উদ্দেশ্যে জামানতের ২৫% অর্থ জমা করলেও অবশিষ্ট ৭৫% অর্থ, ১৫% ভ্যাট ও ৫% আয়কর আদায় না করে অর্থাৎ সম্পূর্ণ টাকা সরকারি খাতে জমা না করে, নির্ধারিত চুক্তিনামা ব্যতীত মোস্তাফিজুর রহমান এবং আসামি নূরুজ্জামান মৃধা ইজারাটির আদেশ প্রদান করেন। ফলে আসামি রুহুল আমিন মনি সরকার অস্থায়ী পশুর হাট পরিচালনা করলেও ইজারার অবশিষ্ট সত্তর লাখ টাকা জমা প্রদান না করে আত্মসাত করেন। এতে মোস্তাফিজুর রহমান এবং নূরুজ্জামান মৃধা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও অন্যকে লাভবান করে নিজেরা লাভবান হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে দুদকের তদন্ত শুরু হলে তারা আত্মসাৎকৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেন।



Discussion about this post