
বশিরুল আলম,আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে: ইট প্রস্তুতকারী শিল্প সংশ্লিষ্ট নতুন কঠোর নীতিমালা ও বিধিনিষেধকে “কালো আইন” আখ্যা দিয়ে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার হরণের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি, চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেল ৩টা ২০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে সমিতির নেতৃবৃন্দ সাত দফা দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টা ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসকের নিকট হস্তান্তর করেন।
উপস্থিত ছিলেন
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন—
বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি, চুয়াডাঙ্গা জেলার সভাপতি কাজী নাসিরুদ্দিন শান্তি,
সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল মোতালেব,
কোষাধক্ষ আবিদুদ্দোজা কেবল,
সদস্যবৃন্দ আবুল হোসেন, হায়দার আলী, আসিরুল ইসলাম সেলিম, হেলাল উদ্দিনসহ ৭০-৮০ জন ইটভাটা মালিক ও শ্রমিক।
মানববন্ধনে মূলত জিগজাগ ইটভাটার লাইসেন্স সংকট, প্রশাসনিক হয়রানি, ক্ষতিপূরণ, মাটি কাটার বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দাবি উত্থাপন করা হয়। তাদের সাত দফা দাবি হলো—
১. জিগজাগ ভাটার দূরত্ব কমানো
২০১৩ সালের ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮(৩)(ঙ) এবং ৮(৩)(খ) উপধারার দূরত্ব-সংক্রান্ত বিধান পরিবর্তন করে জিগজাগ ভাটার জন্য নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ১০০০ মিটারের পরিবর্তে ৪০০ মিটার এবং বনের দূরত্ব ৭০০ মিটার নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছে।
২. হয়রানি ও মোবাইল কোর্ট বন্ধ
জিগজাগ ভাটায় অভিযানের নামে কোনো প্রকার হয়রানি বন্ধ না হলে ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদানে বাধ্যতামূলক অনীহার ঘোষণা দেন মালিকরা।
৩. ইটভাটা বন্ধের আগে ক্ষতিপূরণ প্রদান
যে কোনো ভাটা বন্ধ করতে হলে মালিককে সরকারিভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিধান চালুর দাবি করা হয়েছে।
৪. মাটি কাটার প্রত্যয়নপত্র বাতিল
মাটি কাটার জন্য জেলা প্রশাসকের প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিল করে আরও সহজতর প্রক্রিয়া চালুর দাবি।
৫. কেন্দ্রীয় সমিতির প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক করা
পরিবেশগত ছাড়পত্র, ডিসি লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স,ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য নথিপত্র নবায়নের সময় কেন্দ্রীয় সমিতির প্রত্যয়নপত্র বাধ্যতামূলক করার দাবি।
৬. ইটভাটাকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি
ইটভাটাকে ‘শিল্প’ ঘোষণা করা এবং শিল্পখাত হিসেবে নীতিগত সহায়তা দেওয়ার আহ্বান।
৭. দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা প্রণয়ন
ইটভাটা শিল্পের জন্য বাস্তবসম্মত, পরিবেশবান্ধব ও দীর্ঘমেয়াদী পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের দাবি।
মানববন্ধনে সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন—
“দাবি আদায় না হলে আসন্ন ঈদের পর ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও-পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।”
তারা আরও জানান, কঠোর আইন ও অযৌক্তিক বিধান প্রয়োগের ফলে ইট শিল্প অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। তাই সরকারের প্রতি দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
চুয়াডাঙ্গায় ইটভাটা মালিকদের এ মানববন্ধন জেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগের ওপরই ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



Discussion about this post