
আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :- প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বৃহৎ চলনবিলে বর্ষার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে নির্বিচারে চলছে শামুক নিধন ও কেনাবেচা। ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির শামুক সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন কৃষক ও জেলেরা। সেই শামুক হাঁস ও মাছের খাদ্য হিসেবে কিনছেন এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী। চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশায় এই শামুক নিধনযজ্ঞে মেতেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আইন অমান্য করে প্রকাশ্যে নির্বিচারে শামুক নিধনের ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়লেও দেখার যেন কেউ নেই। সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্ষায় চলনবিলের রুহাই, বিলশা, চরবিলশা, পিপলা, হরদমা ও চাকলবিলে শামুক শিকার চলছে। বিলপাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি ডিঙি নৌকায় করে জাল টেনে শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ করছেন। সেই শামুক বস্তাবন্দি অবস্থায় বিক্রির জন্য ভোরে চর-বিলশায় আনা হয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী হাঁস ও মাছের খাদ্য হিসেবে সেই শামুক কিনে আবার বিক্রি করছেন। শুধু বিলশা পয়েন্টেই দৈনিক প্রায় ৫০ হাজার টাকার শামুক কেনাবেচা হচ্ছে। একজন ব্যক্তি দৈনিক তিন থেকে চারবস্তুা শামুক সংগ্রহ করে থাকেন। মাঝারি একবস্তা শামুক বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। এ হিসেবে শামুক সংগ্রহ করে একজন শ্রমিক দৈনিক ৬শ’-৭শ’ টাকা আয় করছেন। শামুক সংগ্রহকারী মান্নান জানান, বর্ষা মৌসুমে বিলে মাছ ধরে চলে তাদের সংসার। কিন্তু বর্ষার পানি শুকানোর আগমুহুর্তে তাদের হাতে কাজ থাকেনা। এ সময় শামুক বেচেই চলে তার মতো অনেকের অনেকের সংসার। বালশার শামুক ব্যবসায়ী রিপন আলী জানান, বিলশা পয়েন্টে আরো ২ জন ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা স্থানীয় সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিবস্তা ১৭০ টাকায় কিনে তা ১৮০ টাকায় পাইকারী বিক্রি করে থাকেন। সেগুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে পাইকারী বিক্রি করেন। প্রতিদিন ৫/৬ ট্রাক (ছোট আকৃতির) শামুক বেচাকেনা হয়। তিন মাস চলে শামুক কেনাবেচা। নাটোরের হালসার শামুক ক্রেতা শিশির, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের নাদো-সৈয়দপুরের সিদ্দিক, চাটমোহরের ছাইকোলার সাদেক আলী জানান, তারা হাঁস ও মাছের জন্য শামুক কিনেন। ৫শ’ হাঁসের জন্য দৈনিক ১০ বস্তা শামুকের প্রয়োজন হয়। এই শামুক বিলশা থেকে সংগ্রহ করেন। প্রতিবস্তা শামুক কেনেন ১৮০ টাকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শামুক পানিতে থাকা ক্ষুদ্র জীব খেয়ে জলাশয়কে পরিচ্ছন্ন রাখে এবং মাটির উর্বরতা বজায় রাখে। যা চলনবিলের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় খুবই প্রয়োজন। কিন্তু নির্বিচারে আহরণের ফলে জীববৈচিত্রা ঝুঁকির মধ্যে আছে। ফলে চলনবিলের পানি দূষিত হবে ও মাছের উৎপাদন কমে যাবে। পাশাপাশি মাটির উর্বরতাও প্রভাবিত হবে। উপজেলা জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান জানান, শামুককে জলজ প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হলেও এ আইন অমান্য করে চলছে নিধন। অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেলসহ অর্থ দন্ডের বিধান থাকলেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় থামছে না শামুক নিধন। তিনি শামুক নিধন বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি ও মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শামুক-ঝিনুক প্রাকৃতির ফিল্টার। বিলের পানি শুকিয়ে গেলে এসবশামুক-ঝিনুক পচে গিয়ে জমির উবর্রতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নির্বিচারে কৃষকের বন্ধু শামুক ও জলজ উদ্ভিদ নিধন হলে মাটির ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কা আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন, ‘শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহের বিষয়টি আমার জানা নেই। এমনটা হলে সচেতনা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Discussion about this post