
বশিরুল আলম,আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা)প্রতিনিধি:- চুয়াডাঙ্গার জীবননগর সীমান্তে আবারও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নিহত শহিদুল ইসলাম শহিদ (২৪) জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের নষ্কর মালিতার ছেলে। শনিবার (২৯ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে গয়েশপুর সীমান্তের ৭০ নম্বর আন্তর্জাতিক পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দা ও সীমান্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনই এই সীমান্ত দিয়ে নানা অনিয়ম, চোরাচালান ও মাদককারবারের ঝুঁকিপূর্ণ পথচলা চলে। এতে স্থানীয় যুবকরাই অধিকাংশ সময় জড়িয়ে পড়ে। শহিদুলও এমন এক প্রেক্ষাপটের ভুক্তভোগী। সীমান্ত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, শনিবার বিকেলে শহিদুল সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি অবস্থান করলে হঠাৎই বিএসএফ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলি তার শরীরে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান বলে স্থানীয়দের দাবি। স্থানীয় সূত্র বলছে, শহিদুল মাদক পরিবহন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এখানে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা একটি অদৃশ্য চক্রের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। শহিদুলের মৃত্যু সেই চক্রের অংশ হিসেবে নাকি অন্য কোনো ঘটনার জটিলতায়, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে পরিবার দাবি করেছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মতে, শহিদুল স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির দ্বারা প্ররোচিত ও প্রতারিত হতে পারেন। প্রতি বছর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গুলিবর্ষণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, যা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য অস্বস্তিকর। জীবননগর ও গয়েশপুর সীমান্ত এই ধরনের ঘটনার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের সংস্কৃতি বন্ধ করা জরুরি। এ ধরনের ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের উপর মানসিক চাপ তৈরি করে। এ ঘটনার পর বিজিবি ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে। নিহত শহিদুলের লাশ ভারতের সীমান্তের ভেতরে থাকায় তা ফেরত আনার জন্য পতাকা বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।জীবননগর থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। মাদক জড়িত থাকার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।মাত্র ২৪ বছরের শহিদুলের মৃত্যুতে পরিবারে নেমেছে শোকের ছায়া। তার মা-বাবা ও স্বজনরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছেন, “আমরা দেহটা তো চাই—যাতে জানাজা দিয়ে দাফন করতে পারি।”সীমান্তবাসী বলছেন, “এই সীমান্তে প্রতিটি মৃত্যু আমাদের আরও ভীত করে তোলে। আমরা নিরাপত্তা চাই, মানবিক বিচার চাই।”শহিদুল ইসলামের মৃত্যু সীমান্তের বাস্তবতা, সামাজিক সংকট এবং মাদক ব্যবসার ভয়াবহতা নতুন করে সামনে এনেছে। সীমান্ত সুরক্ষা ও মানবাধিকার নিয়ে দুই দেশের দরকার সমন্বিত উদ্যোগ—নইলে এ ধরনের মৃত্যুর মিছিল থামবে না।



Discussion about this post