
নিজস্ব প্রতিবেদক :- গাজীপুরে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় যুবদল নেতাকে ফাঁসানোর অভিযোগ—ফরেনসিক রিপোর্টে মিলল না কোনো আলামত, ভিকটিম পরিবারকে ভয় ভীতি দেখিয়ে করানো হয় মামলা গাজীপুরের শ্রীপুরে ১০ বছরের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় নতুন তথ্য সামনে এসেছে। ফরেনসিক পরীক্ষায় ধর্ষণের কোনো আলামত না পাওয়া এবং ভিকটিম পরিবার নিজেই মামলাকে নাটক বলে দাবি করার পর পুরো ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার এক হুজুরের বিরুদ্ধে। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে যুবদল নেতা মোঃ শামীম প্রধানকে ফাঁসাতে এই ঘটনা সাজানো হয় বলে দাবি করেছে স্থানীয়রা। মাধখলা রওজাতুল উলুম বেগম জরিনা মাদ্রাসার ছাত্রী আতিয়া (১০) জানায়—শামীম আঙ্কেল কিছুই করে নাই। হুজুর আমাকে কী বলতে হবে সব শিখাইয়া দিছে। না বললে মারবে, মাদ্রাসায় পড়তে দেবে না—তাই ভয় পাইয়া বলেছি। শিশুটির বাবা, রিকশাচালক জালাল উদ্দিন বলেন—আমরা গরিব মানুষ, কিছুই বুঝি না। খাইরুল হুজুর জোর করে আমাদের দিয়ে মামলা করাইছে। সব ধরনের খরচ তারা দিবে বলছে, আদালতে নিয়াও বলাইছে। যা বলেছি সব মিথ্যা ও সাজানো। মাদ্রাসার পরিচালক খাইরুল ইসলাম শামীম প্রধানের সাথে আমাদের কোন পারিবারিক ঝামেলা নেই উল্লেখ করে বলেন, মেয়ের মা প্রথমে মামলা করতে রাজি হয়নি, পরবর্তীতে তার স্বামীর সাথে ঝগড়াও হয় এ বিষয়ে। মেয়েও প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে বলছে খাইরুল হুজুর সব শিখিয়ে দিয়েছে আমাকে! কিন্তু আমি আমার চেহারার দিকে তাকে বলতে বললে তখন বলে হুজুর আমাকে কিছু শিখায়নি। এখন ফরেন সিক রিপোর্ট কিভাবে কি আসলো আমি জানিনা। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শামীম প্রধান বলেন, আমার কয়েকজন সৎ ভাই ছোটবেলা থেকেই আমার উপর বিভিন্ন নির্যাতন করতো। যারা আমার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষাৎকার দিয়েছিল মিডিয়াতে তারা খুবই দরিদ্র মানুষ। টাকার লোভ ও ভয় ভীতি দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আমার সৎ ভাই শামসুল, লুৎফর ও সৎ বোনজামাই ওয়াসিম তারা মিথ্যা মামলাটি সাজিয়ে আমাকে হেনস্থা করার জন্য এই অপবাদ দিয়েছে। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করায় ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এতে আমার মান-সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে, দরিদ্র অসহায় এই পরিবারটিকে যারা ব্যবহার করেছে, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। এবং আমার যে মানহানি হল তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। স্থানীয় সূত্র জানায়, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ মাওলানা খাইরুল ইসলাম এবং যুবদল নেতা শামীম প্রধানের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। সেই বিরোধের জেরে হুজুর তাঁর সৎ ভাইদের সহযোগিতায় এই নাটক সাজান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজাহার অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর শিশুটিকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে নির্মাণাধীন ভবনে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয় শামীম প্রধানের বিরুদ্ধে। পরদিন ২৩ অক্টোবর রাতে থানায় অভিযোগ দাখিল হয়। ভিকটিম আতিয়ার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন ডা. সোহানা নাজনীন এবং চূড়ান্ত মতামত প্রদান করেন ডা. মাযহারুল হক। দুইজন চিকিৎসকের পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়— দেহে কোনো আঘাত নেই,হাইমেন অক্ষত,যৌনাঙ্গ স্বাভাবিক জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম বা ধর্ষণের কোনো শারীরিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মাইক্রোবায়োলজি ও রেডিওলজি পরীক্ষাতেও ধর্ষণের পক্ষে কোনো আলামত নেই। চিকিৎসকদের ভাষ্য মতে, সাম্প্রতিক জোরপূর্বক যৌনসঙ্গমের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শ্রীপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল বারিক বলেন— গত ২২ অক্টোবর আতিয়ার বাবা জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেই এবং ভিকটিমের আদালতে জবানবন্দি প্রদর্শন করি। মেডিকেল রিপোর্ট পেয়েছি—সেটি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনো পাইনি। ডিএনএ রিপোর্টসহ সবকিছু যাচাই করে তদন্তের মাধ্যমে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে। রিপোর্ট হাতে পেলেই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফরেনসিক রিপোর্ট, ভিকটিম পরিবারের স্বীকারোক্তি এবং পুলিশের বক্তব্য—সব মিলিয়ে ঘটনাটি এখন তদন্তের পর্যায়ে, আর মাঝখানে “মিথ্যা মামলার নাটক” বিষয়টি স্থানীয় মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।



Discussion about this post