
বশিরুল আলম, আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কেশবপুর গ্রামে নেমে এসেছে গভীর শোকের মেঘ। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী শাফায়েত ইসলাম (২০)–এর আকস্মিক মৃত্যু যেন পুরো গ্রামকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর ২০২৫) স্থানীয় সময় রাতে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) কেশবপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে শাফায়েত ইসলামের বয়স মাত্র ২০। দুই বছর আগে পরিবারের আর্থিক সংকট ঘুচিয়ে স্বপ্নের ভবিষ্যৎ গড়ার আশায় মালয়েশিয়ায় যান তিনি। নির্মাণখাতে কাজ করতেন নিয়মিত পরিশ্রম করে। মায়ের চিকিৎসা, ঘরের সচ্ছলতা ফেরানো এবং নিজের একটি স্থায়ী অবস্থান তৈরির স্বপ্ন ছিল তার। স্বজনদের ভাষায়— “ছেলেটা নিজের কষ্ট ভুলে পরিবারের জন্যই দিন-রাত কাজ করতো।” সহকর্মীরা জানিয়েছেন, কাজ শেষে বুধবার রাতে বাসায় ফেরার সময় শাফায়েত হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হলেও অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকেরা কিছুক্ষণ পরই জানান, শাফায়েত আর নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর কারণ জানতে মেডিকেল রিপোর্ট প্রস্তুত করছে বলে জানা গেছে। তার মৃত্যুর খবর রাতেই দেশে পৌঁছালে শোকের রেশ ছড়িয়ে পড়ে কেশবপুর গ্রামে। শাফায়েতের মৃত্যুতে যেন স্তব্ধ পুরো গ্রাম। বাবা আতিয়ার রহমান বারবার বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন। মা নিশ্চুপ, কেবল চোখের জলে ভেসে যাচ্ছেন। এক প্রতিবেশী বলেন—“শাফায়েত ছিল শান্ত আর পরিশ্রমী ছেলে। তার মতো বয়সে কত স্বপ্ন থাকে মানুষের… সব শেষ হয়ে গেল।” বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, গ্রামের মানুষ ঘণ্টায় ঘণ্টায় এসে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু শোকের ভারে ভেঙে পড়া পরিবারকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা ও সহকর্মীরা জানিয়েছে, বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় মরদেহ দেশে পাঠানোর কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে শাফায়েতের মরদেহ দেশে পৌঁছাবে কয়েক দিনের মধ্যে। পরিবার জানিয়েছে, মরদেহ এলে নিজ গ্রামের কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হবে। শাফায়েত ইসলামের অকাল মৃত্যুতে আলমডাঙ্গা উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে শোকবার্তা জানাচ্ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রবাসী কল্যাণ সংগঠনের সদস্যরাও পরিবারকে সহায়তা ও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। মাত্র ২০ বছরের এক স্বপ্নবান তরুণ—যার সামনে ছিল জীবনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা, যার কাঁধে ছিল পরিবারের প্রত্যাশা, যে নিজের ঘরকে সুখী করতে হাজারো কষ্ট মেনেছিল। তার জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়ার বেদনায় কেশবপুর আজ মর্মাহত। সকলেই শাফায়েত ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনা করছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।



Discussion about this post