
বশিরুল আলম, আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে:- আলমডাঙ্গার রাতের অন্ধকারে যে মোটরসাইকেল চোরচক্র দীর্ঘদিন ধরে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল, শেষ পর্যন্ত সেই অন্ধকারই ছিন্নভিন্ন করেছে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। মাসব্যাপী পরিকল্পিত বিশেষ অভিযানে চুরি হওয়া ১৬টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ, পতন ঘটে একটি সংঘবদ্ধ চোর সিন্ডিকেটের। এই সফল অভিযানের নেতৃত্ব দেন থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান–পিপিএম। তাঁর সাহসী নেতৃত্ব, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও টিমওয়ার্কেই সম্ভব হয়েছে এই বড় সাফল্য।স্থানীয়দের ভাষায়—এ শুধু মোটরসাইকেল উদ্ধার নয়, মানুষের মনে নিরাপত্তার নতুন ভরসা ফেরানোর নাম।গত ৩১ অক্টোবর আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া এলাকায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের অফিসার শামীম হোসেনের হিরো স্পেলেন্ডার মোটরসাইকেলটি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অফিসের বারান্দা থেকে চুরি হয়। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শনাক্ত করে বক্সীপুরের সাগর আলী (২১) এবং মিরপুর উপজেলার নয়ন আলী (২৬)-কে। গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সাগর আলী চোরচক্রের গোপন ঘাঁটি ও নেটওয়ার্ক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। সেই তথ্যই পুরো সিন্ডিকেট ভাঙার পথ খুলে দেয়। ওসি মাসুদুর রহমান–পিপিএম-এর নেতৃত্বে এসআই বাবলু খান, এএসআই রাসেল তালুকদার, এএসআই রোকন উদ্দিন, আসাদুল হকের সমন্বয়ে পুলিশ একাধিক টিম মাঠে নামে। ১৪ নভেম্বর (স্টেশন এলাকা, পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার ৫টি বাইক) ডিসকভার ১১০ ডাইয়াং ৮০ হোন্ডা সিভি সাইন ডিসকভার ১০০ টিভিএস মেট্রো ২ ডিসেম্বর (বক্সীপুর এলাকা, উদ্ধার ৫টি বাইক), হিরো এইচএফ ডিলাক্স, দুটি ডিসকভার ১২৫, হোন্ডা ড্রিম নিও, হিরো স্পেলেন্ডার, ৩ ডিসেম্বর (বিভিন্ন স্থানে অভিযান, উদ্ধার ৫টি বাইক), পালসার ১৫০, ডিসকভার ১২৫, সুজুকি ১৫০, অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০ (দুটি) মোট উদ্ধার: ১৬টি চোরাই মোটরসাইকেল। তদন্তে উঠে এসেছে— আলমডাঙ্গা ও আশপাশ এলাকায় ৫ জন ডিলারের অধীনে প্রায় ২০ জন চোর সক্রিয় ছিল। বেশিরভাগই গ্যারেজ ব্যবসার আড়ালে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করত। চোরদের বয়স ১৬–২৫ বছরের মধ্যে; চুরি করে ৫–১০ মিনিটের মধ্যে নম্বর প্লেট পরিবর্তন করতে পারত।পুলিশ নজরদারি বাড়ালে তারা গাংনী, মিরপুর, পোড়াদহ ও কুষ্টিয়া সদরে তাদের কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের নজরদারি এড়াতে পারেনি এই সিন্ডিকেট।“চোরচক্র যেখানেই লুকাক, আমরা তাদের বের করবই। আমাদের লক্ষ্য শুধু বাইক উদ্ধার নয়—ডিলারসহ পুরো চক্রকে নিশ্চিহ্ন করা। আলমডাঙ্গার মানুষ যেন আগামী পাঁচ বছর নিশ্চিন্তে থাকতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।” অভিযানের পর আলমডাঙ্গার বাজার, গ্যারেজ ও পাড়ামহল্লায় পুলিশের প্রশংসা চলছে। অনেকে বলছেন— “আগের মতো বাইক চুরির আতঙ্ক এখন আর নেই।” “ওসি মাসুদুর রহমান–পিপিএম এখন আমাদের জন্য নিরাপত্তার প্রতীক।”এই অভিযান শুধু একটি সফলতা নয়, এটি স্পষ্ট বার্তা—অপরাধ যত সংগঠিতই হোক, আইনের হাত আরও শক্ত।১৬টি মাসুদাই উদ্ধার, চোরগ্রেপ্তার ও নেটওয়ার্ক চিহ্নিত হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে— অন্ধকার যত গভীরই হোক, আলোর পথ তৈরি হবেই। প্রশাসন আন্তরিক হলে অপরাধচক্র ভেঙে পড়বেই।



Discussion about this post