
বশিরুল আলম, আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে:- চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস—বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে অবিনশ্বর এক গৌরবময় অধ্যায়। ৭ ডিসেম্বর দেশের প্রথম স্বাধীন জেলা হিসেবে চুয়াডাঙ্গার নাম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়। সেই স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আজ রবিবার সকাল থেকে জেলা শহরজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণাঢ্য র্যালি ও দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি। সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের পুরাতন ডিসি কোর্ট চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র্যালিটি শুরু হয়। হাতে জাতীয় পতাকা, উড়ন্ত ছোট পতাকা, প্যানাফ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা আর ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে হাজারো মানুষ অংশ নেয় র্যালিতে। স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষে র্যালিটি হয়ে ওঠে এক মিলনমেলা। র্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শহরের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের ওপর আলোচনা, শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা এবং শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ।
জেলা প্রশাসক বলেন, “চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস আমাদের অস্তিত্বের দিন। এই র্যালি শুধু উদযাপন নয়—এটি তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস জানানো এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার একটি অংশ।” অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা আবেগাপ্লুত হয়ে স্মৃতিচারণ করেন ১৯৭১ সালের রক্তঝরা সেই দিনের কথা। কেউ বললেন প্রথম স্বাধীন জেলা ঘোষণার মুহূর্তের কথা, কেউ বললেন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধের বীরত্বের গল্প। উপস্থিত তরুণ–তরুণীরা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন তাদের বীরত্বগাথা। র্যালিকে ঘিরে পুরো শহরজুড়েই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ছিল দেশাত্মবোধক গান, ছোটখাটো প্রদর্শনী, ঐতিহাসিক ছবি প্রদর্শন ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে ছিল আলোকসজ্জা ও তোরণ। বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক, কবিতা পাঠ ও সংগীতানুষ্ঠান। তরুণ সাংস্কৃতিক কর্মীরা দেশাত্মবোধক সুরে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে দেন। চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি যেন পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিল—স্বাধীনতার জন্য বীরেরা জীবন দিয়েছিলেন, আমরা তা লালন করব দায়িত্ব ও গৌরবে।



Discussion about this post