
বশিরুল আলম, আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে:- ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই চুয়াডাঙ্গা-১ আসন এখন রাজনৈতিক উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দু। সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে সম্ভাব্য সকল প্রার্থীই মাঠে নেমে পড়েছেন দম ফেলার ফুরসত ছাড়াই।গণসংযোগ, পথসভা, দলীয় সমাবেশ ও কর্মীদের পুনর্গঠনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। স্থানীয়ভাবে ধারণা করা হচ্ছে—এই আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের মধ্যে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই দলের প্রার্থী সকাল-বিকাল ছুটে চলেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কারের রূপরেখাকে সামনে রেখে তিনি প্রচারে জোর দিচ্ছেন।
অন্যদিকে আগে থেকেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করায় জামায়াত আরও গোছালো ও সুসংগঠিতভাবে মাঠে অবস্থান নিয়েছে। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, জাকের পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও জেলার দুটি আসনে তাদের স্থায়ী ভোটব্যাংক এখনও একটি বড় ফ্যাক্টর। ফলে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের ফলাফলও অনেকাংশে নির্ভর করবে এই ভোটঘরটির ওপর। চুয়াডাঙ্গা-১ (সদর-আলমডাঙ্গা) জাতীয় সংসদের ৭৯নং আসন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা— ৪,৮৪,৩৮৯ জন। এর মধ্যে— পুরুষ ভোটার: ২,৪১,৬৮০ জন নারী ভোটার: ২,৪২,৭০৫ জন এই বিপুল ভোটারই আগামী নির্বাচনে নির্ধারণ করবেন, কে হবেন এই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি।
বিএনপির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন,“ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন-পীড়নের সময় আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত কমিটি করেছি—কোনো পকেট কমিটি করিনি।”
তিনি আরো বলেন, “নির্বাচিত হলে চুয়াডাঙ্গা শহরে বাইপাস সড়ক, আলমডাঙ্গায় বড় হাসপাতাল এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের টেকসই উন্নয়ন করব। ৩১ দফা রূপরেখা এই অঞ্চলের জন্য একটি গ্যারান্টি; ধানের শীষ বিজয়ী হলে চুয়াডাঙ্গাকে আধুনিক ও জনবান্ধব মডেল শহরে রূপান্তর করা হবে।”জামায়াতের জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল বলেন—“জুলাই বিপ্লবের পর মানুষ সন্ত্রাসমুক্ত, স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ন্যায়ভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা প্রস্তুত। বিশেষ করে নতুন ভোটাররা সুষম উন্নয়নের স্বার্থে দাঁড়িপাল্লাকেই বেছে নেবে।” এনসিপি প্রার্থী মোল্লা ফারুক এহসান নাগরিকদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথাটি তুলে ধরে তিনি বলেন— “চুয়াডাঙ্গার মানুষের প্রধান চাহিদা উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও স্থায়ী কর্মসংস্থান। আমি নির্বাচিত হলে জেলার স্বাস্থ্যখাতে বৃহৎ মাত্রায় উন্নয়ন করব এবং এখানে ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে রপ্তানিমুখী শিল্প গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেব।” ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী মাওলানা জহুরুল ইসলাম আজিজী হাতপাখা প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন— “আস্থা ও অধিকারহীন মানুষের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োজন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মাদকমুক্ত সমাজ—সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” আসন্ন নির্বাচনে এই আসনের ভোটাররা যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন— উন্নত চিকিৎসাসেবা, কর্মসংস্থান, মাদকমুক্ত সমাজ, কৃষি ও শিক্ষাখাতের আধুনিকায়ন, সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন, সুশাসন ও স্বচ্ছ নির্বাচন রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে থাকলেও ভোটাররা অপেক্ষায় আছেন—কারা এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো সমাধানে প্রকৃত ভূমিকা রাখবেন।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নির্বাচনী মাঠ এখন সরগরম, উত্তেজনা তুঙ্গে। প্রার্থীরা নিজস্ব পরিকল্পনা ও উন্নয়ন রূপরেখা তুলে ধরে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। সবকিছু মিলিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন যে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও নজরকাড়া লড়াই উপহার দেবে—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।



Discussion about this post