
বশিরুল আলম, আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া বোরিং মাঠজুড়ে এখন দিগন্তজোড়া হলুদ রঙের উৎসব। শীতের কোমল রোদের নিচে সোনালি সরিষা ফুলের সমারোহ যেন ছুঁয়ে যাচ্ছে horizon—মাঠকে পরিণত করেছে অপরূপ রঙিন চাদরে। বাতাসে দুলতে থাকা ফুলের ঢেউ প্রতিদিনই আকর্ষণ করছে স্থানীয় মানুষ, কৌতূহলী দর্শনার্থী ও তরুণ-তরুণীদের। মাঠজুড়ে এখন উৎসবমুখর কৃষির এক জীবন্ত চিত্র। এ বছর সরিষা চাষের প্রতিটি ধাপ—বীজবপন, জমি প্রস্তুত, পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ—হয়েছে সময়মতো ও সঠিকভাবে। দীর্ঘদিনের তুলনায় পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় গাছের বৃদ্ধি ভালো, ফুলের ঘনত্বও বেশি। ফলে কৃষকদের মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। হাটবোয়ালিয়ার কৃষক জামাল হোসেন, যিনি তিন বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন, জানান—“এবার সরিষা খুব ভালো হয়েছে। গাছ শক্ত, ফুল অনেক বেশি। বিঘা প্রতি ৮–১০ মন ফলন আশা করছি। এ ফলন হলে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে।”তার মতো এলাকার আরও অনেক কৃষকই একই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কাঙ্ক্ষিত ফলন হলে তাদের ঋণমুক্ত হওয়া এবং পরবর্তী মৌসুমের প্রস্তুতি—দুই-ই সহজ হবে। পরিদর্শন শেষে আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মাসুদ হোসেন পলাশ জানান—“এই মৌসুম সরিষা উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাছের উচ্চতা, ফুলের ঘনত্ব, শাখা-প্রশাখা—সবকিছুই অসাধারণ অবস্থায় রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হতে পারে।”তিনি আরও বলেন, মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সরিষার উৎপাদন বাড়লে কৃষকের আয় যেমন বাড়বে, তেমনি দেশের তেলবীজ উৎপাদনেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। স্থানীয়ভাবে সরিষা ও অন্যান্য তেলবীজ উৎপাদন বাড়লে আমদানি নির্ভরতা কমবে। হাটবোয়ালিয়ার মতো উৎপাদনশীল অঞ্চলগুলো তাই হতে পারে দেশের তেলবীজ সেক্টরের বড় শক্তি। সারাদেশে যখন আবাদি জমির পরিমাণ ও শ্রমিক সংকট নিয়ে চিন্তা বাড়ছে, তখন হাটবোয়ালিয়ার সোনালি সরিষা যেন কৃষির নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত দোলা দিচ্ছে আশার বাতাস—কৃষকের স্বপ্ন, দেশের সম্ভাবনা আর আগামী দিনের সমৃদ্ধির বার্তা।



Discussion about this post