প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫, ১০:১৮ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ১:১২ অপরাহ্ণ
চেচোগাড়ি বিলে পাখি নিধনের ছোবল জীববৈচিত্র্য হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী

বশিরুল আলম, আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে: জীবননগর উপজেলার সুটিয়া–শ্রীরামপুর সড়কের পূর্ব পাশে বিস্তৃত চেচোগাড়ি বিল—একসময় অতিথি পাখিদের নিরাপদ নিবাস ও স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধ কেন্দ্রস্থল। শীত এলেই হাজারো পাখির ডানা ঝাপটায় মুখর থাকত বিশাল এই বিল। কিন্তু আজ সেই বিল প্রায় পাখিশূন্য। একের পর এক নির্বিচার পাখি শিকার ও কারেন্ট জালের ফাঁদে বিলের পরিবেশ যেন নিঃশেষ হওয়ার পথে। হাসাদাহ, সুটিয়া ও শ্রীরামপুর—এই তিন গ্রামের মাঝখানে বিস্তৃত চেচোগাড়ি বিল একসময় সারা বছরেই পানি ও পাখির আবাসস্থল ছিল। এখন অধিকাংশ অংশে চাষাবাদ হয়, অল্প কিছু জায়গায় পানি থাকে বছরজুড়ে। তারপরও দেশীয় মাছ, ফিঙ্গেরাজা, শালিকসহ নানা প্রজাতির পাখির বিচরণ ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে একটি চক্রের হাতে নিয়মিত পাখি নিধন এটিকে প্রায় প্রাণহীন করে তুলেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুটিয়া গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে রেজাউল শীত মৌসুম জুড়ে বিলের বিভিন্ন স্থানে কারেন্ট জাল পেতে পাখি শিকার করে আসছে। জালের পাশেই সাদা পলিথিন দিয়ে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে সে নিয়মিত অবস্থান করে। সেই জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে— দেশীয় উপকারী পাখি ফিঙ্গেরাজা,শালিক এবং আরও অসংখ্য জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ প্রজাতি এতে শুধু পাখিই বিলীন হচ্ছে না, নষ্ট হচ্ছে বিলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও কৃষি সহায়ক পরিবেশগত ভারসাম্যও।পরিবেশবিদরা বলছেন, পাখি শুধু জীববৈচিত্র্যের অংশ নয়—কৃষিক্ষেত্রে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিথি পাখির আগমন গ্রামীণ পরিবেশে প্রাণবন্ততা ও সৌন্দর্য যোগ করে। তাদের মতে, চেচোগাড়ি বিলে পাখি শিকার অব্যাহত থাকলে– স্থানীয় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, – কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, – এবং বিলের স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হবে। সচেতন মহল ও এলাকাবাসী দ্রুত নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে—অবৈধ কারেন্ট জাল অপসারণ ও ধ্বংস নিয়মিত মনিটরিং টিম গঠন পাখি শিকারিদের আইনের আওতায় আনা বিলে পরিবেশবান্ধব পুনর্বাসন উদ্যোগ স্থানীয় প্রশাসন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের সমন্বিত অভিযান তাদের দাবি, এখনই সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ না নিলে চেচোগাড়ি বিল পুরোপুরি পাখিশূন্য ও পরিবেশবিধ্বস্ত হয়ে পড়বে। জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল-আমীন বলেন— “অতিথি পাখি কিংবা দেশীয় পাখি শিকারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিলে শিকার বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।”চেচোগাড়ি বিল শুধু একটি জলাশয় নয়—এটি এলাকার পরিবেশ, কৃষি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অমূল্য সম্পদ। পাখি হারালে বিলের প্রাণশক্তিও নিঃশেষ হবে। তাই এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণই পারে বিলটিকে বাঁচিয়ে রাখতে, ফিরিয়ে দিতে হারানো সেই ডানাপ্রসারিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ রুহুল আমিন রতন | মোবাঃ ০১৯১৫-০৯১৫২৯ , ০১৮৫৮-৩১০৮৩৫
© সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত !! Email: [email protected]