
বশিরুল আলম,আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) থেকেঃ মহান বিজয় দিবস। চারদিকে লাল-সবুজের পতাকা, স্বাধীনতার গান আর বিজয়ের উল্লাসে মুখর আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ মাঠ। হাজারো মানুষের ভিড়ে উৎসবের আনন্দ যখন চূড়ায়, ঠিক তখনই নিঃশব্দে হারিয়ে যায় দশ বছরের এক শিশুর সবটুকু হাসি। এরশাদপুর গ্রামের বাসিন্দা রোকনের ছেলে তুষার আহম্মেদ (১০)। আলমডাঙ্গা ব্রাইট মডেল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিল সে—সঙ্গে ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় এবং প্রয়োজনীয় জিনিসটি, একটি সাইকেল। স্কুলে যাওয়া-আসার একমাত্র ভরসা ছিল সেটিই।উৎসব শেষে ফিরে তাকিয়ে দেখে—সাইকেলটি আর নেই।সেই মুহূর্তেই থেমে যায় বিজয়ের আনন্দ। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে ছোট্ট তুষার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শুধু একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল—“আগামীকাল স্কুলে যাব কী করে?”এই প্রশ্নের কোনো উত্তর ছিল না কারও কাছে। হারাল শুধু সাইকেল নয়, হারাল নিরাপত্তার অনুভূতি ও সাইকেল হারানোর কষ্টের চেয়েও বড় ভয় তখন তুষারের ছোট্ট বুকটাকে গ্রাস করে। বাসায় ফিরতে ভয় পাচ্ছিল সে—মায়ের বকা, বাবার রাগের আশঙ্কা তাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। বিজয়ের দিনে যেখানে স্বাধীনতার পতাকা উড়ছে, সেখানে এক শিশুর মনে বন্দি হয়ে গেল ভয়, অসহায়ত্ব আর অনিশ্চয়তা।আজ তুষারের হাতে নেই কোনো পতাকা, নেই কোনো হাসি। আছে শুধু চোখভরা জল আর বুকভরা প্রশ্ন—এই বিজয়ের দিনে কি কেউ ফিরিয়ে দেবে তার হারানো সাইকেল?ফিরে পাবে কি সে তার স্কুলে যাওয়ার স্বপ্নটুকু?প্রশাসনের বক্তব্য ঘটনাটি জানার পর আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পান্না আক্তার বলেন,“বাচ্চাটি কান্নাকাটি করতে করতে আমার কাছে এসেছিল। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ওসি সাহেবকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী খায়রুল ইসলাম বলেন,
“রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হলো জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একটি জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এই দায় প্রশাসন এড়িয়ে যেতে পারে না। বিশেষ করে একজন শিশুর ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও মানবিকভাবে দেখা উচিত।”জাতীয় দিবসের উৎসবে নিরাপত্তার অভাব, শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত না করা এবং জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় নজরদারির ঘাটতি—সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনিক প্রস্তুতি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে।
একটি সাইকেল হয়তো অনেকের কাছে সামান্য বিষয়। কিন্তু তুষারের কাছে সেটিই ছিল তার শিক্ষার পথ, তার স্বপ্নে যাওয়ার সেতু।আজ বিজয়ের দিনে দেশের স্বাধীনতা উদযাপনের পাশাপাশি যদি একজন শিশুর হারানো স্বপ্ন ফিরিয়ে দেওয়া যায়—তবেই বিজয়ের অর্থ হবে সত্যিকারের মানবিক।



Discussion about this post