
বশিরুল আলম, আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি:- নিভু নিভু চোখে নতুন করে আলো ফোটানোর এক মানবিক ইতিহাস রচনা করে চলেছেন আলমডাঙ্গার কৃতি সন্তান শেখ আব্দুল কাদির। ১৯৮৮ সাল থেকে আমেরিকা প্রবাসী এই মানবদরদি মানুষটি টানা প্রায় চার দশক ধরে আলমডাঙ্গার দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। তাঁর সঙ্গে এ মহৎ উদ্যোগে শুরু থেকেই নিরলসভাবে যুক্ত রয়েছেন ঢাকার বন্ধু, আমেরিকা প্রবাসী খালিদ মাহমুদ ও তাঁদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। প্রতি বছর আলমডাঙ্গায় আয়োজিত এই চক্ষু চিকিৎসা কার্যক্রম মানবসেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শতাধিক রোগীর চোখ পরীক্ষা ও চিকিৎসার মধ্যেই অন্তত ১০ জনের চোখে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ত। যাদের ঢাকায় নিয়ে গিয়ে অপারেশন করাতে হতো—যা ছিল সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। তবুও গত ৩৭ বছরে এভাবেই প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের চোখের আলো ফেরাতে সরাসরি সহায়তা করেছেন শেখ আব্দুল কাদির ও খালিদ মাহমুদ। স্থায়ী সমাধানের পথে দুই বন্ধু দীর্ঘদিনের এই ভোগান্তি থেকে রোগীদের মুক্তি দিতে এবার আরও বৃহৎ ও স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন শেখ আব্দুল কাদির আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ক্যানেলসংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠছে একটি আধুনিক ও সুসজ্জিত চক্ষু হাসপাতাল—যার নাম ‘নীলা-শুকতারা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল’। এই মহৎ উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর আজীবনের বন্ধু খালিদ মাহমুদ। এছাড়া দুই পরিবারের সদস্য ও অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী আর্থিক ও নৈতিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে আলমডাঙ্গাতেই বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকদের সমন্বয়ে আধুনিক চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকবে এই হাসপাতালে। মায়ের নামে হাসপাতাল দুই বন্ধু তাঁদের মায়েদের স্মরণে হাসপাতালের নামকরণ করেছেন।খালিদ মাহমুদের মমতাময়ী মায়ের নাম নীলা,শেখ আব্দুল কাদিরের মায়ের নাম শুকতারা। মায়ের ভালোবাসা ও মানবিক চেতনাকে ধারণ করেই এই হাসপাতাল মানুষের চোখের আলো ফেরাবে—এমন প্রত্যাশাই তাঁদের। নির্মাণকাজের অগ্রগতি কালিদাসপুর ক্যানেলের পাশঘেঁষে ইতোমধ্যে প্রায় ৭২ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়েছে। ছয়তলা বিশিষ্ট নয়নাভিরাম ডিজাইনে হাসপাতাল ভবনের ফাউন্ডেশন সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে দোতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে।পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হাসপাতালটি চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আলোকিত আলমডাঙ্গার প্রত্যাশা মানবকল্যাণে ব্রত দুই উদ্যোক্তা—শেখ আব্দুল কাদির ও খালিদ মাহমুদ—এর এই উদ্যোগ শুধু একটি হাসপাতাল নয়, বরং আলমডাঙ্গার হাজারো মানুষের জীবনে আলো ফেরানোর প্রতিশ্রুতি। আমরা এই মহান দুই মানবসেবীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। প্রত্যাশা করি, ‘নীলা-শুকতারা ফাউন্ডেশন চক্ষু হাসপাতাল’ নিভু নিভু চোখে আলো ফিরিয়ে আলমডাঙ্গাকে আলোকিত করবে—মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে।



Discussion about this post