
মোঃ ফজলুল কবির গামা:- গ্রামের নাম গুড়পাড়া, গ্রামের মানুষ রস সংগ্রহ ও গুড়ে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে করে আসছে। ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নে এই গ্রামটি সবুজের সমারহে ভরপুর। ওই গ্রামের লিটন নামের একজন কষৃক শুধু রস গুড় উৎপাদনের জন্য রীতিমত চাষ করেছেন শতাধিক খেঁজুর গাছ। বাণিজ্যিকভাবে খেঁজুর গুড়ের উৎপাদন শুরু করেছেন তিনি, এতে সফলতাও পেয়েছেন। খেজুর গুড় বাঙালির অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মিষ্টি, যা শীতকালে অগ্রহায়ণ মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত খেজুরের রস থেকে তৈরি হয়। চাষী লিটনের সাথে কথা বলে জানা যায় তার বাবা দাদা সারা জীবন খাঁটি খেঁজুরের গুড় তৈরি করেছেন, কিন্তু এখন আর আগের মত খেঁজুর গাছ পাওয়া যায়না। যে কারণে তিনি আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে নিজের ২০ শতাংশ জমিতে ১২০টি খেঁজুর গাছ রোপন করেন। বর্তমান তার জমিতে ১০০টি খেঁজুর গাছ আছে। গত ৬ বছর যাবত তিনি ওই গাছ গুলো থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করছেন। তিনি আরো জানান কোন প্রকার ভেজাল ছাড়াই নিজের জমিতে রোপনকৃত খেঁজুর গাছ থেকে নিজেই রস সংগ্রহ করে খাঁটি গুড় তৈরি করেন। তার এ গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাড়ি থেকেই সব গুড় বিক্রি হয়ে যায়। বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি কেজি গুড় ৩০০ টাকা বলে তিনি জানান। প্রতি বছর খেঁজুর গুড় বিক্রি করে তিনি আয় করেন ২ লক্ষ টাকার অধিক। গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি মহি উদ্দিন জানান, এক দেড়শো বছর আগে এলাকায় প্রচুর খেঁজুর গাছ থাকায় অনেক গুড় তৈরি হতো সেই থেকে গ্রামটির নাম হয়েছে গুড়পাড়া। গ্রামটি ঘুরে দেখা যায় গ্রামের রাস্তার দু’ধারে এখনও প্রচুর খেজুঁর গাছ আপন ঠিকানায় দাড়িঁয়ে আছে। প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে মাটির কলস। পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত এলাকার পরিবেশ। খেজুর গুড়ের ইতিহাস সুপ্রাচীন, যা এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের অংশ, তবে উনিশ শতকে ইংরেজ ব্যবসায়ীদের আগমনের ফলে এর বাণিজ্যিকীকরণ ও শিল্পায়নের শুরু হয়, বিশেষ করে যশোর ও আশপাশের অঞ্চলে, যা পরবর্তীতে একটি বড় শিল্পে পরিণত হয়। যদিও বর্তমানে এর ঐতিহ্য কমে আসছে। এক সময় খেঁজুর গুড়ের খ্যাতির জন্যই গ্রামটির নাম হয়েছে গুড়পাড়া বলে জানান (অব) অধ্যাপকওলিয়ার রহমান । সেই গ্রামে এখন আর আগের মত খেঁজুর গাছ না থাকায় ভাটা পড়েছে খেঁজুর গুড়ে, অন্যদিকে ভেজালে সয়লাব বাজার। তারপরও গ্রামটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে রীতিমত যুদ্ধ করে চলেছেন লিটনের মত গাছিরা। কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদ হোসেন জানান খেঁজুর গাছ সাধারণত রাস্তার পাশে বা জমির আলই-এ হয় কিন্তু কৃষক লিটন যেটা করেছেন তা হলো সম্পূর্ণ জমিতে তিনি খেঁজুর গাছ চাষ করেছেন, তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন কোটচাঁদপুর কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সব রকম সহযোগীতা করা হবে।


Discussion about this post