প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫, ৬:৪৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫, ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ
হিমেল হাওয়ায় নীরব কান্না একটুখানি সহানুভূতি আর একটি কম্বলের আকুতি

বশিরুল আলম আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে:- আলমডাঙ্গায় শীত যেন এবার আরও নির্মম রূপ ধারণ করেছে। তাপমাত্রা নেমে এসেছে প্রায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে গোটা উপজেলা। কিন্তু শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে দায়িত্ব প্রশাসনের, সেই দায়িত্ব পালনে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। উপজেলা জুড়ে ঘুরে দেখা গেছে, শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে কিংবা ভাঙা ঘরের বারান্দায় রাত কাটানো মানুষদের কপালে জোটেনি একটুকরো উষ্ণতা। শোনা গেল, নামমাত্রভাবে স্টেশনে দু’দিন কম্বল বিতরণের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের হাতে পৌঁছায়নি। বিশেষ করে রাস্তার পাশে বসবাসকারী মানুষ, দিনমজুর, ভাসমান পরিবার ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য এই অবহেলা হয়ে উঠেছে চরম অমানবিক। শীতে শরীর নিথর হয়ে আসছে, অথচ প্রশাসন যেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়।২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়নের ২১১টি গ্রাম ও একটি পৌরসভা নিয়ে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষের বসবাস। উপজেলায় রয়েছে ৬টি আবাসন প্রকল্প, ১৩টি এতিমখানা এবং একটি বৃদ্ধাশ্রম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব প্রতিষ্ঠানের কোথাও চলতি শীতে দৃশ্যমানভাবে কম্বল বিতরণের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। জামজামি ইউনিয়নের নারায়ণপুর আবাসনের এক বৃদ্ধা কাঁপা কণ্ঠে বলেন,“এই শীতেও একটা কম্বল পেলাম না। যে শীত পড়ছে, মনে হচ্ছে এ বছরই সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা। আমরা গরিব মানুষ অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি—কখন একটু গরম কাপড় পাবো। গত বছর উপজেলা থেকে আগে কম্বল পেয়েছিলাম, কিন্তু এবার এখনো কিছুই পাইনি।” শুধু একজন নয়—এমন অভিযোগ রয়েছে বহু শীতার্ত মানুষের। বৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থদের জন্য এই পরিস্থিতি ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে। প্রশ্ন উঠছে—এই শীতেও যদি প্রশাসন দায়িত্ব না নেয়, তবে কবে নেবে? এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পান্না আক্তার বলেন,“নির্বাচনের ব্যস্ততার কারণে এবার কিছুটা দেরি হচ্ছে। প্রতিদিনই মিটিং হচ্ছে। আশা করছি, দুই-তিন কার্যদিবসের মধ্যেই কম্বল বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।”তবে শীত যে প্রশাসনিক ব্যস্ততার অপেক্ষা করে না, তা বাস্তবতা প্রতিদিনই মনে করিয়ে দিচ্ছে আলমডাঙ্গার শীতার্ত মানুষগুলো। দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে কম্বল বিতরণে ব্যর্থতার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। এটি কেবল অবহেলা নয়—এটি দায়িত্বহীনতার নির্মম উদাহরণ।শীতের রাতে যখন হিমেল হাওয়ায় ভেসে আসে নীরব কান্না, তখন একটি কম্বলই হয়ে উঠতে পারে কারও বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়। এখন দেখার বিষয়—প্রশাসন সেই আর্তনাদ শুনবে কি না।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ রুহুল আমিন রতন | মোবাঃ ০১৯১৫-০৯১৫২৯ , ০১৮৫৮-৩১০৮৩৫
© সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত !! Email: [email protected]