নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার রেললাইন থেকে ছিন্নভিন্ন যে পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তারা সেখানে কীভাবে গেলেন, কী তাদের পরিচয়; সেটি হত্যা নাকি দুর্ঘটনা, সেসবের কোনো উত্তরই মিলছে না। লাশগুলো উদ্ধারের পর একদিন পেরিয়ে গেলেও তাদের পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি; লাশের দাবি নিয়েও আসেননি কেউ। এমনকি আঙুলের ছাপ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের ব্যবস্থাও কাজে আসেনি। পুলিশের ধারণা, নিহতদের পরিচয়পত্র নেই।
ঘটনাস্থল থেকে কোনো মোবাইল ফোন, ব্যাগ কিছুই পাওয়া যায়নি যা দিয়ে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়।
পুলিশের মরিয়া চেষ্টার অংশ হিসেবে নিহতদেরকে ‘ভবঘুরে’ হিসেবে ধরে নিয়ে তাদের মুখচ্ছবি তুলে পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন স্টেশনে, যাতে অন্য ভবঘুরেদের দেখিয়ে পরিচয় উদ্ধার করা যায়। পুলিশের ঢাকা রেলওয়ে জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি দুর্ঘটনা না হত্যাকাণ্ড, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি নিহতদের পরিচয় পাওয়ার জন্য।” সোমবার সকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে রায়পুরা উপজেলার খাকচক এলাকায় ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রেললাইনের পাশে পাঁচটি মরদেহ ছিন্নভিন্ন অবস্থায় দেখা যায়। খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশসহ জেলা পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই ঘটনাস্থলে যায়। পরিচয় না মেলায় রাতেই মরদেহগুলো নরসিংদী রেলওয়ে কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। রেল পুলিশের সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম রেলপথের নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার খাকচক ও কমলপুর গ্রামের মধ্যবর্তী রেললাইনে লাশগুলো পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা।
[caption id="" align="alignnone" width="1024"]
মরদেহগুলো নরসিংদী রেলওয়ে কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।[/caption]
তিনি বলেন, “কিন্তু তারা কারা সে বিষয়ে ন্যূনতম কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। পাঁচজনই পুরুষ, তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে হতে পারে। তাদের পরনে ছিল প্যান্ট, লুঙ্গি, গেঞ্জি ধরণের পোশাক। “দেহাংশগুলোর কিছু দুই রেলরলাইনের মাঝে আর কিছু রেললাইনের পাশে ফসলের ক্ষেতে পাওয়া গিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কোনো লাগেজ বা কাপড় রাখার ব্যাগ, ট্রাভেল ব্যাগ, মোবাইল ফোন এমনকি কোনো কাগজও পাওয়া যায়নি যা থেকে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়।” নিহতদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বের করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে পিবিআই। নরসিংদী পিবিআইর এসআই মো. জমির বলেন, “নিহত পাঁচজনের কারও ফিঙারের ছাপের সঙ্গে কোনো আইডি কার্ডের যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। “তারা উদ্বাস্তু ধরনের ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের বয়সও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।”
রেল পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, “তারা ভবঘুরে প্রকৃতির ছিলেন ধরে নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্টেশনে তাদের মুখমণ্ডলের যথাসম্ভব পরিষ্কার ছবি তুলে লোক পাঠানো হচ্ছে। তাদেরকে বলা হয়েছে স্টেশনে স্টেশনে যে ভবঘুরে প্রকৃতির লোকজন থাকে, তাদের ছবিগুলো দেখিয়ে পরিচয় জানার চেষ্টা করতে।”
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ রুহুল আমিন রতন | মোবাঃ ০১৯১৫-০৯১৫২৯ , ০১৮৫৮-৩১০৮৩৫