
স্টাফ রিপোটার:- দেশের সর্ববৃহত ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহি ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান কেরুজ কমপ্লেক্স। সরকারের লাভ জনক এ প্রতিষ্ঠানটির চিনি কারখানায় ধ্বস নেমেছে ১ যুগেরো আগে। ফি বছর ওই কারখানায় মোটা অংকের লোকসান গুনতে হয় কর্তৃপক্ষকে। চিনি কারখানা সহ বিভিন্ন বিভাগের লোকসান পুষিয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মুনাফা অর্জন হচ্ছে ডিস্টিলারী বিভাগে। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষের এক ঘেয়েমু চিন্তা-ধারায় ডিস্টিলারী বিভাগের মুনাফাও হুমকির মুখে পড়তে পারে। একের পর এক শ্রমিক-কর্মচারিদের অন্য মিলে বদলি, মিলের বন্ডেড ওয়ার হাউজের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ ইনচার্জদের আকস্মিক বদলি করে সেখানে অদক্ষ, অযোগ্যদের পদায়ন অন্যতম কারণ হিসেবে ধারণা করছে গুনিজনেরা। বদলি আতংকে শুধুই শ্রমিক-কর্মচারিরাই নয়, এ আতংকে ভুগছেন খোদ নেতৃবৃন্দের কেউ কেউ। এতে কর্ম উদ্দিপনা হচ্ছে ব্যহত। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নিয়ন্ত্রনাধীন কেরুজ কমপ্লেক্স। চিনি কারখানা, ডিস্টিলারী, খামার, জৈব সার কারখানা সহ রয়েছে বেশ কয়েকটি বিভাগ। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরুজ কমপ্লেক্সে চিনি কারখানায় ১ যুগেরো বেশী সময় ধরে প্রতি বছর প্রচুর অংকের লোকসান গুনছে। পাশাপাশি লোকসান গুনতে হয়েছে খামার সহ অন্যান্য বিভাগেও। শুধুমাত্র ডিস্টিলারী বিভাগের মুনাফা অর্জনের অর্থ দিয়ে অন্য বিভাগের লোকসান পুষানো হয়ে থাকে। সম্প্রতি সময় ডিস্টিলারী বিভাগেও ধ্বস নামতে শুরু করেছে। জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ডিস্টিলারী বিভাগে বিলেতি মদ (ফরেণ লিকার) উৎপান হয়েছিলো ২ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৮ কেস। ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৭৪ কেস বিক্রি হয়েছিলো। অথচ ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের একই সময়ে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ২১৯ কেস। ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৭৫৭ কেস বিক্রি হয়েছে। ৮১ হাজার ৫৯৯ কেস উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি টাকার পরিমান ১৪৬ কোটি ৮৭ লাখ ৮২ হাজার। বিক্রয় ঘাটতি ৭৯ হাজার ৯১৭ কেস। যার টাকার পরিমান ১৪৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার। চলতি অর্থ বছর শেষ হতে আর মাত্র ২ মাস বাকি।
এ সময়ের মধ্যে উৎপাদন ও বিক্রয় ঘাটতি কোন ভাবেই পুরণ সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে। যা মুনাফা অর্জনের বড় ধরণের বাধা হয়ে দাড়াতে পারে। বিলেতি মদ বিক্রিই যেখানে আয়ের চালিকা শক্তি সেখানে কর্তৃপক্ষ বাংলা মদ বোতল জাত করা নিয়ে মেতে উঠেছেন। তবে বাংলা মদ বোতল জাত করলে লাভের চাইতে লোকশানের মাত্রা আরও বাড়বে বলে কেউ ধারণা করছে মিলের অনেকেই। অদুরদর্শীতা ও পরিকল্পনা বিহিন কর্মকান্ডে ব্যাক্তির সুবিধা হলেও প্রতিষ্ঠানকে বড় ধরণের লোকশানের মুখে পড়তে হতে পারে। কর্তাবাবুরা দায়িত্ব নিয়ে আসেন আবার চলেও যান। অদক্ষতা ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিষ্ঠানের লোকশানের দায়ভার সহ খেসারত কে বহন করবে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এ দিকে কেরুজ চিনিকলে গত ৪ মাসে ৭ জন শ্রমিক-কর্মচারিকে দেশের বিভিন্ন মিলে বদলি করা হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি কেরুজ পারবতিপুর বন্ডেড ওয়ার হাউজের ইনচার্জ, শ্রমিক নেতা সৌমিক হাসান রূপমকে বদলি করা হয় বন্ধ চিনিকলে পঞ্চগড়ে। ২৪ ফেব্রুয়ারি কেরুজ ডিস্টিলারী বিভাগের সেলস অফিসার, সহকারি ব্যবস্থাপক (বানিজ্যিক) জহির উদ্দিনকে বদলি করা হয়েছে রাজশাহী চিনিকলে। ১৬ এপ্রিল কেরুজ ডিস্টিলারী বিভাগের ফরেণ লিকার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বদলি করা হয়েছে ঠাকুরগাও চিনিকলে। এ ছাড়া গত বুধবার কেরুজ শ্রীমঙ্গল বন্ডেড ওয়ার হাউজের ইনচার্জ এজাজ আহমেদ বাপ্পিকে বদলি করা হয়েছে জ্বিল বাংলা সুগার মিলে জ্যেষ্ট করনীক (প্রশাসন) বিভাগে। কেরুজ চিনিকলের কারখানা বিভাগের নির্মান শাখার সুপারভাইজার জাহাঙ্গীর আলমকে পদায়ন করা হয়েছে শ্রীমঙ্গল বন্ডেন্ড ওয়ার হাউজের ইনচার্জ হিসেবে। কেরুজ কৃষি খামারের জ্যেষ্ট করনীক কাম স্টোর ক্লার্ক মহিউদ্দিনকে বরিশাল বন্ডেড ওয়ার হাউজের ইনচার্জ পদে পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া কেরুজ চিনিকলের কৃষি বিভাগের জ্যেষ্ট চেকিং ঋন করনীক ইমতিয়াজুর রহমানকে পদায়ন করা হয়েছে পাবনা বন্ডেড ওয়ার হাউজে। ঢাকা ওয়ার হাউজের ইনচার্জ আব্দুর রশিদ গত ১৫ এপ্রিল চাকরী থেকে অবসর গ্রহন করায় সে স্থানে পদায়ন করা হয়েছে হিজলগাড়ি ফার্মের করনীক হারুন অর রশিদকে।
গত ৫ জানুয়ারি সৌমিক হাসান রূপমকে পারবতিপুর ওয়ার হাউজ থেকে বন্ধ পঞ্চগর চিনিকলে বদলি করা হলেও রাতারাতি ওই হাউজে পদায়ন করা হয় রাশিদুল ইসলামকে। তার পদায়ন নিয়েও নানা আলোচনা-সমলোচনার সৃস্টি হয়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উঠেছে, সম্প্রতি পদায়নকৃত ঢাকা, পাবনা, রাজশাহী, শ্রীমঙ্গল, পারবতিপুর বন্ডেড ওয়ার হাউজের ইনচার্জ হিসেবে যাদের পদায়ন করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকই নতুন। মিলের গুরুত্বপূর্ণ ওই সমস্ত হাউজগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজন প্রশিক্ষনের। প্রশিক্ষন বিহীন হাউজ পরিচালনায় অদক্ষতার ক্ষেত্রে লোকশানের বোঝার দায়ভার কে নেবে ? বেশ কয়েকজন ইনচার্জের সাথে আলোচনাকালে তারা বলেন, করপোরশেন কর্তৃক ওয়ার হাউজের জন্য ১৯ জনের সেটাপ রয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পর্ষদ তা তোয়াক্কা করছেনা। মানছেনা সেটাপ নীতি। নিজেদের খেয়াল খুশি মতো যা ইচ্ছা তা করছে। অনেকেই ১০/১২ বছর ওয়ার হাউজের ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করে এখনোও তাদের কাগজে কলমে বহু ভুল হয়। বৃট্রিশের তৈরী কাগজপত্র বুঝতে হিমশিম খেতে হয় পুরাতনদেরও। সেখানে কিভাবে নতুনরা এত সহজে হাউজ পরিচালনা করবে ? তাছাড়া হাউজে সহকারি ইনচার্জের পদ তৈরীর কেন হয়েছে ? সহকারিরা হাতে-কলমে প্রশিক্ষন নিয়েইতো ভবিষ্যতে ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ দিকে মিলের শ্রমিক-কর্মচারিদের কেউ কেউ ফ্যাসিস্টের দোসর বিধায় বদলি ঘটনা ঘটছে। সেক্ষেত্রে বহু কর্মকর্তাওতো রয়েছেন দোসরের তালিকায়। অনেকেই রয়েছেন দীর্ঘদিন একই চেয়ারে। তাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কোন পদক্ষেপ কেন নিচ্ছেনা তা নিয়েও প্রশ্ন জনমনে। এ ব্যাপারে মিলের শ্রমিক-কর্মচারিরা দুষছেন নেতৃবৃন্দদের। তাদের ভাষ্য মতে আজ নেতৃত্বহীন ইউনিয়ন। অভিভাবকহীন শ্রমিক-কর্মচারিরা। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়ার জন্য কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বহুবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।



Discussion about this post