
শেখ মামুনুর রশীদ মামুন:- ময়মনসিংহের চায়না মোড় এলাকায় এক ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়ে চলেছে একটি অবৈধ সিসা তৈরির কারখানা। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় মোশাররফ মন্ডল নামের এক ব্যক্তি পুরাতন ব্যাটারি কাঠ কয়লার আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করছেন সিসা, যার ফলে পুরো অঞ্চল আক্রান্ত হচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়া, অ্যাসিড পানি ও ভয়াবহ পরিবেশ দূষণে। সরেজমিনে দেখা যায়, রাত ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলছে এই প্রাণঘাতী কর্মকাণ্ড। ২০-৩০ বছরের ২০-২৫ জন শ্রমিক পুরাতন ব্যাটারি থেকে প্লেট বের করে আগুনে ফেলে সিসা তৈরির কাজ করছে। এই ধোঁয়ায় আশপাশের অন্তত ২-৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানুষের চোখ, নাক, গলা জ্বালাপোড়া করে, অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে। শিশু ও বৃদ্ধরা পড়ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানার পশ্চিমে ফসলি জমি, উত্তরে ব্যস্ত মেইন রোড, দক্ষিণে ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম আর পূর্ব পাশে জাওগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়—সেই স্কুলের শিক্ষার্থীরাও রেহাই পাচ্ছে না বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে। ধোঁয়া, ছাই ও অ্যাসিড মিশ্রিত পানি আশপাশের জমিতে গিয়ে ফসল, গাছের ফুল-ফল এমনকি গবাদিপশুর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত এক বছরে অন্তত ১০টি গরু মারা গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এলাকাবাসীরা জানান, ভয় ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে এই কারখানার মালিকপক্ষ। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে হুমকি, ভয়ভীতি এমনকি হামলার আশঙ্কায় মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন। ২৭ দিন কারাভোগ শেষে এক সাংবাদিককে হাত-পা কেটে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে অভিযুক্ত মোশাররফ মন্ডল, যিনি একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। ২০২৩ সালে একবার র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে কারখানাটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পরই পুনরায় চালু হয় এই মৃত্যু ফ্যাক্টরি। শ্রমিকরাও স্বীকার করছেন, তারা জীবনবিপন্ন জেনেও পেটের দায়ে কাজ করছেন। প্রশাসনকে জানালেই মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত আসে, তবে কিছুদিন পর সব আবার আগের মতো হয়ে যায়। স্থানীয় সচেতন মহল এবং ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর আকুল আবেদন—এই অবৈধ কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হোক। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কারখানাটি উচ্ছেদ করা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তারা ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট থানার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। প্রাণের দায়ে প্রতিবাদ—পরিবেশ রক্ষায় এখনই প্রয়োজন কার্যকর ব্যবস্থা।



Discussion about this post