
শেখ মামুনুর রশীদ মামুন:- একটি সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত থাকার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং সত্যের নির্ভীক প্রকাশ। আর এই গুরুদায়িত্বটি পালন করেন সাংবাদিকরা—যাঁরা কলমের মাধ্যমে জনমত গড়ে তোলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন এবং ন্যায়বিচারের পথকে আলোকিত করেন। কিন্তু যখন সাংবাদিকের কলম থেমে যায়, তখন শুধু সংবাদপ্রবাহই থেমে যায় না—বিচারপ্রার্থী মানুষের কণ্ঠস্বরও স্তব্ধ হয়ে পড়ে। সাংবাদিকতা হলো সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ। বিচার বিভাগের কাজ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, প্রশাসনের কাজ তা বাস্তবায়ন করা, আর সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে—এই গোটা প্রক্রিয়াকে জনসমক্ষে তুলে ধরা, যাতে কোথাও কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি বা অন্যায় হলে তা সামনে আসে এবং সংশ্লিষ্টরা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে। সাংবাদিক যদি নির্ভয়ে কাজ করতে না পারেন, যদি তাঁর লেখনী বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে অন্যায়ের তথ্য সামনে আসবে কীভাবে? একটি কলম যখন সত্য তুলে ধরতে ভয় পায়, তখনই সমাজে অন্ধকার নামতে শুরু করে। তখন দোষী বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, আর নিরপরাধ নিপীড়িত হয় নীরবে। সত্য প্রকাশে বাধা এলে শুধু একজন সাংবাদিক ক্ষতিগ্রস্ত হন না—ক্ষতিগ্রস্ত হয় গোটা সমাজ, দুর্বল হয় বিচারব্যবস্থা। কারণ, বিচার তখন আর সমাজের সামনে স্বচ্ছ থাকে না। আজকের দুনিয়ায় তথ্য হচ্ছে শক্তি। এই তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তারা যদি চাপ, ভয়, কিংবা প্রভাবের কারণে সত্য গোপন করেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কখনোই প্রকৃত সত্য জানতে পারবেন না। সাংবাদিকের কলম যেন সমাজের আয়না—এই আয়না যদি ঝাপসা হয়ে যায়, তাহলে সমাজ নিজের মুখও চিনতে পারবে না। তাই দরকার, সাংবাদিকদের নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ নিশ্চিত করা। তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সত্য বলার অধিকার এবং পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিত না করা গেলে ন্যায়বিচার শুধু বিলম্বিতই নয়, অবরুদ্ধও হবে। শেষ কথা, সাংবাদিকের কলম বন্ধ মানে জনগণের চোখ বন্ধ, কণ্ঠ রুদ্ধ এবং সত্যের পথ রুদ্ধ। সমাজ যদি ন্যায়বিচার চায়, তবে তাকে অবশ্যই সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। কারণ সত্য বলার কলম চললে তবেই ন্যায়বিচার জীবিত থাকে।



Discussion about this post