
আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :- নাটোরের বড়াইগ্রামে তিরাইল ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবুল হাসান সাঈদী’র কাছে চাঁদা দাবি করে অভিভাবক সমাবেশে বাধা দেওয়ায় ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, এতে অন্তত পাঁচ জন আহত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে মাদ্রাসায় অভিভাবক সমাবেশ চলাকালে এই সংঘর্ষ হয়। মাদ্রাসার শিক্ষক এবং অভিভাবকরা জানান, পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী মাদ্রাসায় অভিভাবক সমাবেশ চলছিল, এ সময় ৫ নং মাঝগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি শিহাব আহমেদ শিমুল ১৫/২০ জনকে সাথে নিয়ে মাদ্রাসায় প্রবেশ করে সমাবেশে বাধা দেয় এবং বলে আমার সাথে সমাধান না করে মাদ্রাসা সুপার প্রতিষ্ঠানে আসতে পারবে না এবং কোন অনুষ্ঠান হবে না। এতে অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে, এ সময় একই এলাকার ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও তার অনুসারী ৪/৫ জন গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চাইলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ড এবং হাতাহাতির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। উল্লেখ্য, মাদ্রাসার বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজের অভিযোগে গত ২৮ বছর বহিষ্কার ছিলেন মাদ্রাসা সুপার আবুল হাসান সাঈদী । দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ১১ নভেম্বর স্ব-পদে বহাল হন তিনি। যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় মাদ্রাসায় ফিরতে পারছিলেন না সুপার আবুল হাসান সাঈদী। এ বিষয়ে মাদ্রাসা সুপার আবুল হাসান সাঈদী বলেন, দীর্ঘ সময় আইনি প্রক্রিয়া শেষে এবং বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের অনুমতি সাপেক্ষে আমি গত বছর নভেম্বরে যোগদান করেছি, যোগদানের পর থেকেই ছাত্রদল সভাপতি শিহাব আহমেদ শিমুল আমার কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন, আমি চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা স্বীকার করলে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়, তারই ধারাবাহিকতায় আজকে মাদ্রাসায় অভিভাবক সমাবেশে এসে বাধা দেয়, আমাকে অবরুদ্ধ করে। এসময় তারা অপর এক পক্ষের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আমি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার দাবি জানাই একই সাথে মাদ্রাসার পাঠদানের জন্য পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি। চাঁদা দাবি ও সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে ৫ নং মাঝগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি শিহাব জানান, এই মাদ্রাসার সম্পদ আমার দাদা দান করেছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত মাদ্রাসা সুপারের কারনে মামলা চালাতে গিয়ে গত ২৮ বছরে মাদ্রাসার প্রায় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে, এলাকার সচেতন মানুষ হিসেবে আমরা গিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি, ব্যক্তিগতভাবে কোন চাঁদা চাওয়া হয়নি। ওই সময় সুপারের সহযোগীরা আমাদের উপরে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়, এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছে, এটা কোন দলীয় সংঘর্ষ নয়। তিনি আরো বলেন, মাদ্রাসায় আমাদের অবস্থান বিষয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং দলীয় নেতাকর্মী সকলেই অবগত আছেন। এ বিষয়ে সংঘর্ষে জড়ানো অপরপক্ষ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের এলাকার স্বনামধন্য এই মাদ্রাসায় আজকে অভিভাবক সমাবেশ ছিল, সেখানে গিয়ে ছাত্রদল সভাপতি শিহাব অধ্যক্ষের কাছে চাঁদা দাবি করে এবং সমাবেশ বন্ধ করে ভীতি ছড়ায়, আমরা কয়েকজন গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করতেই, শিহাবের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন আমাদের মারধর করে, এতে আমি সহ চার পাঁচ জন আহত হয়েছে, আহতদের স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আমরা এ চাঁদাবাজের দলীয় পদ বাতিলসহ আইনগত ভাবে সুবিচারের দাবি জানাই। মাদ্রাসার বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার লাইলা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, মাদ্রাসা সুপার আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে যোগদান করেছেন, আজ অভিভাবক সমাবেশ ছিল, সেখানে ছাত্রদলের সভাপতিসহ কয়েকজন গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করি, বর্তমানে মাদ্রাসা এবং এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি গোলাম সারোয়ার হোসেন জানান, তিরাইল মাদ্রাসায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের কথা শুনেছি, এখন পর্যন্ত কোন পক্ষ অভিযোগ দায়ের করেনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



Discussion about this post