
নিজস্ব প্রতিবেদক :- গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) কাওছার হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ১২ তম গ্রেডের এই সরকারি কর্মকর্তার সর্বোচ্চ বেতন মাত্র ১১ হাজার ৩শত থেকে ২৭ হাজার ৩শত টাকা হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোটিপতি বনে গেছেন। চাকরির আয়ের সঙ্গে সম্পদের বিশাল ফারাক নজরে আসার পর বিষয়টি নিয়ে জনমনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী পদে ১৯৯৬ সালে চাকরিতে যোগ দিয়েই কপাল খুলে যায় এ কর্মকর্তার। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কয়েক বছরের ব্যবধানে জমি খারিজ, খাজনা, নামজারি ও পর্চার কাজে ঘুষ গ্রহণ করে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ‘জমির নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে গেলেই কাউসারকে ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে তিনি আগের কয়েকটি কর্মস্থলে বদলিও হয়েছিলেন। এত অনিয়ম-দুর্নীতির শাস্তি কি শুধুই বদলি ? স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, নামজারি, পর্চা, জমির খাজনা এবং দাখিলা প্রদান করাতে তিনি মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ভূমি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র টাকার বিনিময়ে গায়েব করেছেন। জমির পর্চা, খাজনা ও নামজারির ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করতেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তার এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছেন। সরেজমিনে ও তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর সদর থানার মারীয়ালী মৌজাস্থ এস.এ ১৭৭ নং দাগের জনৈক হারেজ মোল্লার নিকট থেকে দেড় কোটি টাকায় কিনেছেন ৮.২৫, একই এলাকার মৃত বছুর উদ্দিনের ছেলে জনৈক আক্কাছ আলীর নিকট থেকে তিন কোটি টাকায় কিনেছেন ২০ শতাংশ, জনৈক মাসুদ মোক্তারের নিকট থেকে ৩০ লাখ টাকায় কিনেছেন ৩.৩ শতাংশ এবং দেশীপাড়া মৌজাস্থ জনৈক মোবারক হোসেন গংদের নিকট থেকে প্রায় ২৭ লাখ টাকায় কিনেছেন ৫.৭৭ শতাংশ, জনৈক নামির মুন্সির ছেলে হাবিবুরের নিকট থেকে ৫০ লাখ টাকায় কিনেছেন ৮.২৫ শতাংশ জমি এই ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খরিদ করেছেন। এমনকি এই ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার একত্রে জনৈক মিজান ও জরিনা গংদের নিকট থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকায় কিনেছেন এস.এ ১৭৮ নং দাগে ২৪.৭৫ শতাংশ জমি খরিদ করেছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের অনুসারী এই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুর সদরের মারীয়ালী ও দেশীপাড়া এলাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দ্বারা জমি-জায়গা নিজের ও আত্মীয়-স্বজনের নামে কিনেছেন। স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, এই ভূমি সহকারী কর্মকর্তা গাজীপুর সদরের মারীয়ালী এলাকায় এক অসহায় নারী শরীফা খাতুনের সম্পত্তি জোর করে দখল করতে নানা ভাবে হুমকী প্রদান করে। এঘটনায় ভুক্তভোগী নারী এই ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত সোমবার (১৬ জুন ২০২৫) সদর থানায় ১২৭৯ নং জিডি করেন। এমনকি একই এলাকার বৃদ্ধ আলী নেওয়াজের জমি আত্মসাৎ করার জন্য বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে তার কাছ থেকে গত ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই ৯৩০৬/১৬ নং ক্ষমতা অর্পণ বা আম মোক্তারনামা দলিল রেজিষ্ট্রী করে। পরবর্তীতে এই ভূমি কর্মকর্তার নামে রেজিষ্ট্রীকৃত ক্ষমতা অর্পণ বা আম- মোক্তারনামা দলিল বাতিলের জন্যে আলী নেওয়াজ গাজীপুরের ১ম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ২৬০/২০২৫ নং মোকদ্দমা দায়ের করে। এজমি আত্মসাৎ করার অসৎ উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নিরহ মানুষদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। এই ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ ও সম্পদ অর্জনের বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যদি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তবে তার চাকুরীচ্যুতি এবং অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি উঠেছে সর্বমহল থেকে। এসংক্রান্তে দেশীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোবারক জানান, উনার জায়গা কাওছার বায়না করেছেন। আর নামির মুন্সির ছেলে ও বোনের কাছ থেকে জমি কিনেছেন। এবিষয়ে জানতে জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কাওছার হোসেন মোল্লার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে উনি নাহার মঞ্জিলের বাড়ীসহ জমি তার স্ত্রীর নামে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বাকি জায়গা খরিদ করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে জানতে কালীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কাউসার হোসেন মোল্লার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, নাহার মঞ্জিল ব্যতীত উনার কোন জায়গা জমি খরিদ করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে মারীয়ালী নাওভাঙ্গা এলাকার আলী নেওয়াজের কাছ থেকে জমি ক্ষমতা অর্পণ বা আমমোক্তারনামা দলিল রেজিষ্ট্রেশন করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। পরবর্তী আলী নেওয়াজ উনার নামে আমমোক্তার নামা দলিল বাতিলের মামলা দায়ের করেছেন। উনি জমি খরিদ করার বিষয়ে উনার নিয়োগকারী কর্মকর্তার অনুমতি নেন নি।



Discussion about this post