
নেত্রকোনা প্রতিনিধি :- নানা আয়োজনে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় বাংলা সাহিত্যের জননন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। শনিবার (১৯ জুলাই) দিনব্যাপী তার পিতৃভূমি উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এসব কর্মসূচির আয়োজন করে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে সকাল ১০টার দিকে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ মাঠে পবিত্র কোরআন খতমের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা করা হয়। পরে কালো ব্যাজ ধারণ, শোক র্যালি, হুমায়ূন আহমেদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে কবিতাপাঠ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, মিলাদ ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনা সভায় শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক শরীফ আনিস আহমেদ, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সদস্য, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও হুমায়ূন ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, পল্লী এলাকায় উপজেলার রোয়াইলবাড়ী ইউনিয়ন কুতুবপুরে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় দীর্ঘকাল থেকে শিক্ষায় অবহেলিত ছিল এই এলাকার মানুষ। তাই হুমায়ুন আহমেদ তার মা আয়েশা ফয়েজের অনুরোধে এখানে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৬ সালে মাত্র ৪৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা করে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। বর্তমানে স্কুলটিতে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী এবং ১৯ জন শিক্ষক- কর্মচারী রয়েছেন।
তিনি গর্ব করে বলেন, সারা দেশে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বিপর্যয়ের মধ্যেও ২০২৫ সালে আমাদের বিদ্যাপীঠে এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলায় সর্বোচ্চ জিপিএ ৫-সহ শত ভাগ পাস করার রেকর্ড করেছেন। ড. হুমায়ূন আহমেদ স্যারের অবদান আজও সাহিত্য প্রেমীদের হৃদয়ে সমুজ্জ্বল। স্যারের সৃষ্ট চরিত্র, গল্প এবং দর্শন আজও পাঠকের মনে গভীর দাগ রেখে যাচ্ছে। আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি এই মহৎ মানুষটিকে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোনার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার এক ভাই বিজ্ঞান কল্পকাহিনির লেখক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
হুমায়ূন আহমেদ তার দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে উপহার দিয়েছেন সাড়া জাগানো সব উপন্যাস। তৈরি করেছেন হিমু, মিসির আলীর মতো জনপ্রিয় চরিত্র। নির্মাতা হিসেবেও উপহার দিয়েছেন জনপ্রিয় নাটক এবং চলচ্চিত্র। বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। তার মধ্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। ক্ষণজন্মা এই কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের জীবন ২০১২সালে ১৯ জুলাই আমেরিকার একটি হাসপাতালে কেড়ে নেয় মরণব্যাধি ক্যানসার। মুগ্ধ পাঠকের হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন তার রচনাবলিতে আজীবন।



Discussion about this post