মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়া নগদ এর পাঁচ বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়ার আড়াই মাস পার না হতেই নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও শেয়ারধারীদের তথ্য খতিয়ে দেখতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতার পালাবদলের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নতুন গভর্নর নিয়োগের সপ্তাহখানেকের মধ্যে ডাক বিভাগের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি হিসেবে প্রচার পাওয়া নগদের বিষয়ে এমন সিদ্ধান্তের খবর এল।
চিঠিতে উদ্যোক্তা কোম্পানিগুলোর নিবন্ধনপত্র যুক্ত করে সেগুলোর তথ্যাদি যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সংগ্রহ করে জমা দিতে বলা হয়।
চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়ার এতদিন পর বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের নতুন করে তথ্য কেন জানতে চাওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার আগে ও পরে বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। লাইসেন্স দেওয়ার আগে ডকুমেন্ট দেওয়া হলেও লাইসেন্স দেওয়ার পরও এসব তথ্য যাচাই করা হয়।
”এক্ষেত্রে কোনো তথ্য যদি ভুল দেওয়া হয় তাহলে চুক্তি বাতিল হয়। সেটা চুক্তি স্বাক্ষরেও লেখা থাকে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসির উদ্যোক্তা শেয়ারধারীদের তথ্য যাচাই করার’ প্রয়োজনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এজন্য পাঁচটি বিদেশি উদ্যোক্তা কোম্পানির নাম যুক্ত করে সেগুলোর বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
কোম্পানি পাঁচটি হল- ব্লু হেভেন ভেঞ্চারস এলএলসি, অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনারস এলএলসি, জেন ফিনটেক এলএলসি, ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস পিটিই লিমিটেড ও ট্রপে টেকনোলজিস এলএলসি।
তাছাড়া চিঠিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন ও ঠিকানা বা অবস্থান, গঠনকালীন মালিকানা কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, ব্যবসায়িক কার্যক্রম, বর্তমান মালিকানা ও মালিকদের নাগরিকত্ব, বিগত তিন বছরের কর পরবর্তী প্রকৃত মুনাফা ও প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ এবং হোল্ডিং কোম্পানির ক্ষেত্রে সহযোগী কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রমের তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।
চলতি বছর জুনে নগদকে ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন তফসিলি ব্যাংকের তালিকায় যুক্ত করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।।
এরপর অনুমোদন সংক্রান্ত একটি পত্র নগদ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, “সরকার পরিবর্তনের আগে ডিজিটাল ব্যাংকিং উদ্বোধন করা হয় কোনো রকম অ্যানালাইসিস ছাড়া। সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ব্যাংক আইনে বিশেষ ছাড় দিয়ে ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’কে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।”
ব্যাংক কোম্পানি আইনে একক ব্যক্তি, পরিবার বা কোম্পানির কোনো ব্যাংকে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণের বিধিনিষেধ রয়েছে, তাতে ছাড় দেওয়া হয়েছে নগদকে।
ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪ ক (১) ধারার উল্লেখ করে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১২১ ধারার ক্ষমতাবলে ব্লু হেভেন ভেঞ্চারস এলএলসি, আরসিসি ক্যাপিটাল পার্টনারস এলএলসি এবং ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস পিটিই লিমিটেড কর্তৃক ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’র শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে ১৪ ক (১) ধারা প্রযোজ্য হবে না।
এসব কোম্পানির কাছে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে নগদ ডিজিটাল ব্যাংকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় নগদকে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ৮ আগস্ট নগদ এবং কড়িকে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নীতিগত অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
কেন ডিজিটাল ব্যাংক
নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনা ও লেনদেন আরও সহজ করতে সরকারের ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
বেশ কয়েক বছরের প্রস্তুতি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করে গত বছরের জুন থেকে। ২৫ অক্টোবর ৫২টি আবেদনের মধ্যে আট প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রথম ধাপে অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলো হল নগদ, এসিআই এর ‘কড়ি’, কয়েকটি ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগ ডিজি টেন, ব্র্যাকের উদ্যোগ বিকাশ ও ব্যাংক এশিয়ার উদ্যোগ ডিজিটাল ব্যাংক লিমিটেড।
শুরুতে এই পাঁচ ডিজিটাল ব্যাংকের সেবা পর্যালোচনার পর আরও তিনটিকে কার্যক্রম শুরুর জন্য লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
Discussion about this post