
স্টাফ রিপোর্টার:- গাজীপুরের শ্রীপুরে দাঁতের চিকিৎসা দেওয়ার নামে বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে ‘স্মৃতি ডেন্টাল কেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। চেম্বারটি ১৬ বছরের পুরনো হলেও মাত্র দুই বছর আগে পরিচালক সাইফুল ইসলাম ডেন্টাল টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। অথচ এর আগের ১৪ বছর ধরেই রোগী দেখার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন কোনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসক নেই, অথচ সাইনবোর্ডে ডাক্তার দেখানো হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত আট মাস ধরে একজন ডাক্তার অনুপস্থিত থাকলেও তার নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে রোগী দেখিয়ে আসছে চেম্বার কর্তৃপক্ষ। চেম্বারের পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও সহকারী জহিরুল ইসলাম নিজেরাই দাঁতের চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এদের মধ্যে জহিরুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পর্যন্তও করেনি বলে জানান স্থানীয় —তবুও দিনের পর দিন রোগী দেখার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, দাঁতের ব্যথা নিয়ে গেলে চেম্বারে গিয়ে দেখি, ডাক্তারের চেহারাও আলাদা, নামও আলাদা। পরে জানলাম আসল ডাক্তার ৮ মাস ধরে আসেন না। যিনি দেখছেন, তিনি কোনো ডাক্তারই না! আরেক ভুক্তভোগী, গৃহবধূ রাবেয়া খাতুন বলেন, ” আমি মহিলা ডাক্তার ভেবে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলাম। ওষুধ খেয়ে শরীর আরও খারাপ হয়ে যায়। পরে বুঝি, ডাক্তারই ছিল না! তবে চেম্বারে নাম থাকা চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদা খান পারশা জানান,”আমি দুই বছর স্মৃতি ডেন্টালে রোগী দেখেছি। পারিবারিক কারণে গত ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখের পর আর যাইনি। তবে আবার সম্প্রতি জয়েন করেছি। আমার অনুপস্থিতিতে যদি সাইনবোর্ড ব্যবহার করে চিকিৎসা চালানো হয়ে থাকে, সেটা আমার অজানা। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ডেন্টাল টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা করে স্মৃতি ডেন্টাল কেয়ার প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড এবং ভিজিটিং কার্ডে নিজের নামের আগে “ডেন্টিস্ট” নাম ব্যবহার করছে রোগীদের সাথে প্রতারণা করছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি থেকে টেকনোলজিস্টরাই রোগীদের জন্য এন্টিবায়োটিকসহ ওষুধ লিখে দিচ্ছেন—যা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়া চিকিৎসাসেবা দেওয়া আইনবিরোধী। যারা ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং যেসব ডেন্টাল কেয়ারের বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, ডেন্টাল কেয়ারের নামে প্রতারণা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ভোক্তাদের ঠকানো হয় এমন ডেন্টাল কেয়ারগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্মৃতি ডেন্টাল কেয়ারে গেলে প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। সাইফুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যেখানে দাঁতের চিকিৎসা সংবেদনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়, সেখানে এমন অবৈধ কার্যক্রম বছরের পর বছর ধরে কীভাবে চলছে? এসব অযোগ্য ব্যক্তি দিয়ে পরিচালিত ডেন্টাল চেম্বারগুলো বন্ধ না করা গেলে সাধারণ মানুষের বাড়বে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। তাই প্রশাসনের উচিত দ্রুত এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।



Discussion about this post