
শফিকুল ইসলাম শিমুল,গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি:- গাজীপুরের টঙ্গীতে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব দখল করে সেখানে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্থানীয় এক প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের স্থানীয় ওয়ার্ড শাখার সাবেক সভাপতি মো. আলাউদ্দিন মিয়া টঙ্গী পূর্ব থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর টঙ্গীর এরশাদনগর ১ নম্বর ব্লকের বড়বাজার এলাকায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ওয়ার্ড কার্যালয় জোরপূর্বক দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত রশিদ খলিফা। প্রথমে সেখানে ডেকোরেটরের মালামাল রাখার জন্য গোডাউন তৈরি করা হয়। পরে ২০১২ সালে ওই ক্লাবঘর ভেঙে সেখানে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করেন তিনি। ২০১৯ সালে রশিদ খলিফার মৃত্যুর পর তার ছেলে নাঈম (৩০), ফালান (৩২) ও দিদার (২৫)সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ওই জায়গা দখলে রাখে।
অভিযোগ রয়েছে, তারা স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কার্যালয়টি নিজেদের দখলে রেখেছে। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের স্থানীয় নেতারা সম্প্রতি ক্লাবঘর পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেন। গত ১৭ জুলাই সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনায় বসতে চাইলে রশিদ খলিফার ছেলেরা রাজি হয়নি। বরং উল্টো তাদের নানা হুমকি প্রদান করে। এরপর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা থানায় অভিযোগ জানাতে বাধ্য হন। অভিযোগকারী আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, আমাদের দলের ঐতিহ্যবাহী কার্যালয়টি বহু বছর ধরে দখল করে রেখেছে তারা। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি মীমাংসা করতে চাইলে উল্টো আমাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) আবারও বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হলে মৃত রশিদ খলিফার ছেলে ফালান প্রকাশ্যে হট্টগোল ও হুমকি প্রদর্শন করেন বলে অভিযোগ করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। বড়বাজারের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ী জয়নুল আবেদীন মোল্লা ও আব্দুল জলিল জানান, এখানে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি ক্লাবঘর ছিল, তা সবাই জানে। ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই সেটি দখল হয়ে যায়।
তাঁরা বলেন, এ পর্যন্ত একাধিকবার ওই কার্যালয় উদ্ধারের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে অভিযুক্তরা জায়গাটি ছাড়েনি। অভিযুক্ত মৃত রশিদের দ্বিতীয় স্ত্রী শাহনাজ বেগমও ক্লাব দখল করে প্রথমে গোডাউন ও পরে মার্কেট নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এখানে একটি ক্লাব ছিল সেটিতে আমার স্বামী প্রথমে ডেকোরেটর এর মালামাল রাখার জন্য গোডাউন নির্মাণ করে পরবর্তীতে এখানে মার্কেট হয়। আমি বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রস্তুত থাকলেও তার প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা বিষয়টি সমাধান করতে চাচ্ছেনা। ৪৯ নং ওয়ার্ড যুব দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন মিলন বলেন, এটা শুধু একটি ক্লাবঘর দখলের ঘটনা নয়, এটা বিএনপিকে দমনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। আমাদের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল করার জন্যই এভাবে ক্লাব দখল করে রাখা হয়েছে। বৃহত্তর টঙ্গী থানা যুব দলের সাবেক ১নং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম কামু বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যালয় দীর্ঘদিন ধরে দখলে রয়েছে। স্থানীয়ভাবে আমরা বারবার বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রভাব এখনো খাটিয়ে তারা জমিটি দখল করে রেখেছে।আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা আইনের কাছে ন্যায় বিচার চাই। জিসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বাবুল চৌধুরী বলেন,এটি আমাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অংশ ছিল। ক্ষমতার জোরে সেটি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমাদের ক্লাবঘর ফেরত চাই। এ বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চলছে।



Discussion about this post