
শেখ মামুনুর রশীদ মামুন-বিশেষ প্রতিনিধি:- ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার দুটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষক নিয়োগকে ঘিরে ভয়াবহ ঘুষ–জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এনটিআরসিএ (NTRCA) নিবন্ধন ছাড়াই, অনুমোদনহীন বিষয় নির্ধারণ, জাল সনদ ব্যবহার এবং সরকারি কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগপত্র তৈরির মতো একাধিক অনিয়ম করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিজন প্রার্থীর কাছ থেকে ১৫–২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যে ময়মনসিংহ অঞ্চলের শিক্ষা উপ-পরিচালক (ডিডি) পর্যন্ত ভাগ পেয়েছেন বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে—১. ফজলুল হক চৌধুরী মহিলা কলেজ (EIIN: 104215, কলেজ কোড: 7290) ২. এন ইসলামিয়া একাডেমি কলেজ দুটি কলেজে অন্তত ৪৫ জন শিক্ষক অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন বলে জানা গেছে। ভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ,তথ্যে আরও জানা যায়, ভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করা প্রার্থীদের সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেমন— ইতিহাসে পড়াশোনা করা প্রার্থীকে পালি বিভাগের প্রভাষক পদে,মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে সংগীত বিভাগে,একসময় আয়া হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিকে সংস্কৃতি বিভাগে,রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীকে মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনহীন বিষয় ও জমির দলিলে জালিয়াতি। শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই কিছু বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কলেজ প্রতিষ্ঠার জমির দলিলেও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ডিসি প্রতিনিধি উপস্থিতি বা বৈধ নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রমের প্রমাণ মেলেনি। বরং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগপত্র প্রস্তুতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। ফজলুল হক চৌধুরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হোসেন আলী চৌধুরীকে নিয়োগ বাণিজ্যের মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এন ইসলামিয়া একাডেমি কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ও পরিচালনা কমিটির সদস্য আনোয়ারুল ইসলামকে জাল সনদ সরবরাহের মূল ব্যক্তি হিসেবে স্থানীয়রা অভিযুক্ত করছেন। আইনের আওতায় আনার দাবি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড দণ্ডবিধির ৪৬৮, ৪৭১ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ। প্রমাণিত হলে দায়ীদের ৭–১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসাইন বলেন, “অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে এখনো কোনো তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়নি বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের ক্ষোভ, স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের নিয়োগ বাণিজ্য তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। তারা দ্রুত দুদক, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত, ভুয়া নিয়োগ বাতিল এবং অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে হালুয়াঘাটে অনুরূপ অভিযোগে এক অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারাকান্দার এ অভিযোগে এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।



Discussion about this post