
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর :: ভুল ডিজাইনে নির্মিত ১২ বছর ধরে মানুষের চরম দুর্ভোগের এয়ারপোর্ট টঙ্গী গাজীপুর বিআরটি সড়ক প্রকল্পটি অবশেষে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। সড়কের ৯৭ ভাগ কাজ সম্পন্ন হলেও পদে পদে ক্রটি থাকায় সরকারের শীর্ষ মহল বিআরটি প্রকল্পটি আর এগিয়ে না নিয়ে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইন উদ্দিন সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন।
এ পর্যন্ত বিআরটির সড়কটি নির্মাণে খরচ করা হয়েছে ৪ হাজার দুইশ ৬৮ কোটি টাকা। নির্মাণ শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। সড়কের ৯৭ ভাগ কাজ শেষ হলেও সম্প্রতি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বাকি ৩ ভাগ কাজ সম্পন্নের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনে আবেদন পাঠায়। চরম দুর্নীতি আর অপচয়ে হাজার কোটি টাকা লুটপাটের তথ্য থাকায় পরিকল্পনা কমিশন ৩ হাজার কোটি টাকার আবেদনটি ফেরত পাঠায়। আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিআরটি সড়ক প্রকল্পটি ঘুরে দেখা গেছে, এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর শিববাড়ি পর্যন্ত ২২ কিলোমিটারের সড়কটির শুরু এয়ারপোর্ট টার্মিনাল বরাবর ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে। ময়মনসিংহ মহাসড়কের এয়ারপোর্টে ফ্লাইওভার দিয়ে শুরু বিআরটি সড়কটি। এর অল্প কিছু দূর পরে স্হল সড়ক শুরু। আবার উত্তরা জসিমউদদীনের আরেকটু আগ থেকে আবার উড়াল সড়ক। এরপর রাজলক্ষ্মী আজমপুরে আবার স্হল সড়ক। পানির ঢেউয়ের মতো সড়কটি। এভাবে আজমপুর থেকে স্হল সড়ক হয়ে বিএনএস থেকে আবার উড়াল সড়ক শুরু হয়ে টঙ্গী চেরাগআলী কলেজ গেট পর্যন্ত আবার উড়াল সড়ক।
মাঝে আবার টঙ্গী বাজার তুরাগ নদীতে ১০ লেনের বিআরটি সেতু। টঙ্গী বাজার তুরাগ নদীর সেতুতে গাড়ি চলাচলে ১০ লেনের সুবিধা রাখা হলেও টঙ্গী বাজারে আসা যাওয়ায় মানুষের চলাচল ও গাড়ি চলাচলে কোন ব্যবস্হা রাখা হয়নি। ফলে উত্তরা আবদুল্লাহপুর থেকে টঙ্গী বাজার ও টঙ্গী বাজার থেকে উত্তরায় যাতায়াতে কোন ব্যবস্হা না থাকায় দুপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।
উত্তরা বিএনএস থেকে স্হল ও উড়াল পথে গাড়িঘোড়া চললেও টঙ্গী বাজারে স্হল পথে গাড়ি বা মানুষ চলাচলে কোন ব্যবস্হা রাখা হয়নি। মানুষ চলাচলে টঙ্গী বাজার তুরাগ নদীতে বেইলি ব্রীজ নির্মাণে বেরিকেড হয়ে পড়ায় তুরাগ নদীতে সরাসরি নৌচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে গত ৫ বছর ধরে। ফলে টঙ্গী বাজার হয়ে তুরাগ নদীতে ট্রলার নৌকা লঞ্চ চলচল বন্ধ হয়ে গেছে বিআরটি সড়ক প্রকল্পের জন্য।
বিআরটি সড়কে গাড়ি ঘোড়া এপারওপার হওয়ার জন্যও অপরিকল্পিত লিক রাখায় ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকা পড়ে থাকতে হচ্ছে ঢাকা টঙ্গী গাজীপুর ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল মহাসড়কে। দোরাস্তা তেরাস্তা ও চৌরাস্তা গুলোতে সরাসরি গাড়ি ঘোড়া এপারওপারে ব্যবস্হা রাখায় এমন যানজট বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সরাসরি রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া এপারওপার না করালে টঙ্গীর রাস্তায় কোন যানজট থাকতো না। টঙ্গী চেরাগআলীর যানজট এখন টঙ্গীবাসী ও ঢাকা গাজীপুর ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী হাজারো যানবাহন ও যাত্রীদের এক চরম দুর্ভোগের নাম।
এদিকে বিআরটি সড়কটিতে টঙ্গী কলেজ গেট থেকে গাজীপুর শিববাড়ি পর্যন্ত শুধু স্হল পথে গাড়ি ঘোড়া চলাচলের ব্যবস্হা রাখা হয়েছে। মাঝখানের লেন দিয়ে রাখা হয়েছে বিআরটির এদিক ওদিক গাড়ি চলাচলে। টঙ্গী কলেজ গেট থেকে গাজীপুর শিববাড়ি পর্যন্ত বিআরটি সড়ক হচ্ছে একটি মরণ ফাঁদ। প্রতিদিনই এ সড়কটিতে রাস্তা পার হতে গিয়ে দুএকটি দুর্ঘটনায় আহত নিহত হচ্ছেন বহু মানুষ। টঙ্গী কলেজ গেট থেকে গাজীপুর শিববাড়ি পর্যন্ত বিআরটি সড়ক এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যে, কোন পথচারী রাস্তা পারাপার হতে গিয়েই গাড়ির ধাক্কায় আহত নিহত হচ্ছেন। এপর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত ও হাজারো মানুষ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বিআরটি সড়কের মাঝে আরেক সড়কে দুদিক থেকে গাড়ি ঘোড়া চলাচলের ধাক্কায়।
ভুল ডিজাইনের কারনে টঙ্গী কলেজ গেট থেকে গাজীপুর শিববাড়ি পর্যন্ত বিআরটি রাস্তাটি পথচারী পরাপারে হিমশিমে পড়েন। পথচারীদের রাস্তা পারাপারে প্রথমে ডান দিকে তাকিয়ে অর্ধেক রাস্তা পার হয়ে আবার মাঝখানের রাস্তায় এসে ডানে তাকিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে বাম দিক থেকে আসা গাড়ির চাপা বা ধাক্কার শিকার হন পথচারীরা। এভাবে বাম দিক থেকে আসা আরেক রাস্তা পাড়ি দিয়ে পুরো রাস্তা পার হতে হয় ৫ ধাপে ডানে বামে দেখেশুনে। যারা এমন আজব খেয়াল করে রাস্তা পার হন না তারাই দুর্ঘটনায় পড়েন। এমন অবস্থা এখন টঙ্গী কলেজ গেট থেকে ১২ কিলোমিটারের গাজীপুরের শিববাড়ি পর্যন্ত বিআরটি সড়কে।
ভুল ডিজাইনে নির্মাণ করা বিআরটি প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিচার চান স্হানীয় জনগন। ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া বিআরটি সড়ক প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু না হওয়ায় ১২ বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্হানীয়রা। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইন উদ্দিন বলেন, আপাতত বিআরটি প্রজেক্ট বাতিল করা হলেও নেক্সট গভর্নমেন্ট যদি মনে করেন তা চালিয়ে নেবেন, তাও তারা করতে পারবেন বাস কিনে। তারা বিআরটি প্রকল্পটি পুনরায় চালুও করতে পারবেন।
স্হানীয়রা বলছেন, বিআরটি সড়কের সুফল পেতে হলে সড়কটিকে এক্সপ্রেসওয়েতে রুপান্তর করে সড়কটি এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর শিববাড়ি, মাওনা চৌরাস্তা ও চন্দ্রা পর্যন্ত এগিয়ে নিতে হবে।
বুয়েটের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, জামাই আদর করে ঠিকাদারের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে বিআরটি সড়ক প্রকল্প থেকে। স্হানীয়রা বলছেন, গত ১২ বছরে বিআরটি সড়কে শুধু লুটপাট আর দুর্নীতি হয়েছে কাজের কাজ কিছুই হয়নি দুর্ভোগ ছাড়া! ভুল ডিজাইনে বিআরটি সড়ক নির্মাণ ও ভবিষ্যতে জনগণের দুর্ভোগ আর না বাড়াতে এয়ারপোর্ট টঙ্গী গাজীপুর বিআরটি সড়ক প্রকল্পটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে!



Discussion about this post