
বশিরুল আলম, আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পুরাতন বাস্তপুরে এক রাতে তিন কৃষকের স্বপ্নভরা ফসল নষ্ট করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ভুট্টা, ধানের চারা ও পেঁয়াজ—এ তিন ফসল কেটে বিনষ্ট করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিন কৃষক। বুধবার গভীর রাতে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে এলাকার কৃষকদের। ভুক্তভোগীদের দাবি, এ ধরনের রহস্যজনক ফসল কর্তন তাদের আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। স্থানীয় সূত্র ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বরাতে জানা যায়, মালিতা পাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে খোকনের দুই বিঘা ভুট্টার জমি রাতের আঁধারে কে বা কারা কলাগাছ টেনে ভেঙে দিয়েছে। একই গ্রামের আলমগীর হোসেনের তিন কাঠা জমির ধানের চারা ধারালো হাসুয়া দিয়ে কেটে ফেলে। আর কাবিল মালিতার ১০ কাঠা জমির ফলন্ত পেঁয়াজও অজ্ঞাত ব্যক্তিরা নষ্ট করে দেয়। তিন কৃষকের মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই লাখ টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃষক খোকন মালিতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “অনেক কষ্ট করে দুই বিঘা ভুট্টা করেছি। ফুল ফোটার আগেই সব গাছ ভেঙে দিয়েছে। এত খরচের পরে ফসল ঘরে তুলতে না পারার যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। যাকে হয়েছে সেই বোঝে।”গরিব কৃষক কাবিল মালিতা জানান, “ধারদেনা করে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। রাতে এসে সব কেটে দিলো। আমার তো কোনো শত্রুই নেই। তবু কেন এমন ক্ষতি করল বুঝতে পারছি না। আমার বিচার চাই।” এ ঘটনায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, দুর্বৃত্তরা ধরা না পড়লে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে। ঘটনার খবর পাওয়ার পর উপজেলা কৃষি অফিস তদন্ত শুরু করেছে। উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, “খবর পাওয়ার পরই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”এদিকে দামুড়হুদা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিন ভুক্তভোগী কৃষক। তবে তারা কেউই সন্দেহভাজন হিসেবে নির্দিষ্ট কারও নাম বলতে পারেননি। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মেজবাহ্ জানান, “ফসল কর্তনের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুরাতন বাস্তপুরের কৃষিজীবী মানুষের ভাষ্য, কৃষকের ফসল শুধু তার আয়ের উৎস নয়; এতে জড়িয়ে থাকে একটি পরিবারের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ ও বেঁচে থাকার লড়াই। এক রাতে তিন কৃষকের এমন ক্ষতি পুরো গ্রামকে নাড়া দিয়েছে। গ্রামবাসীর দাবি, দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হোক, যাতে আর কোনো কৃষক এভাবে ক্ষতির মুখে না পড়েন।



Discussion about this post